খ্রীষ্টীয় ষষ্ঠ শতক থেকে চালুক্য বংশের উত্থান দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। দ্বিতীয় পুলকেশী (Pulakeshin II) তাঁর চাচা মঙ্গলেশকে পরাজিত ও নিহত করে সিংহাসনে বসেন। বাতাপির চালুক্য বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন প্রথম কীর্তিবর্মনের পুত্র দ্বিতীয় পুলকেশী (610-642 খ্রি:)। তিনি ‘সত্যাশ্রয়’ নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ‘বল্লভ’, ‘সত্যাশ্রয়’, ‘পৃথিবী বল্লভ’, ‘পরমেশ্বর পরম ভাগবত’ নামেও পরিচিত ছিলেন।
পিতৃব্য মঙ্গলেশের সঙ্গে গৃহযুদ্ধের কালে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। সুতরাং তাঁর রাজত্বকালের প্রথম কয়েক বৎসর বিদ্রোহী অঞ্চলগুলিকে নিজ অধিকারে আনার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় হয়। দ্বিতীয় পুলকেশীর জৈন সভাকবি রবিকীর্তি রচিত ‘আইহোল প্রশস্তি’তে তাঁর দিগ্বিজয়ের বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি কর্ণাটকের কদম্বরাজ্য, মহীশূরের গঙ্গরাজ্য এবং কোঙ্কনের মৌর্যরাজ্য জয় করেন। দক্ষিণ গুজরাটের লাট রাজ্য, মালব রাজ্য, এবং গুর্জর রাজ্য তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন। দ্বিতীয় পুলকেশী কনৌজ-রাজ হর্ষবর্ধনকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি দাক্ষিণাত্যের পূর্বাঞ্চল বা কৃষ্ণা-গোদাবরী অঞ্চল জয় করেন এবং তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা কুব্জ-বিষ্ণুবর্ধনকে এই অঞ্চলের শাসক নিযুক্ত করেন। দ্বিতীয় পুলকেশী পল্লব-রাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মনকে পরাস্ত করে তাঁর রাজধানী কাঞ্চি নগরীকে বিপন্ন করেন। সুদূর দক্ষিণের চের, চোল, পাণ্ড্য রাজ্যও তাঁর অধিকারভুক্ত হয়। এইভাবে প্রায় সমগ্র দাক্ষিণাত্যের উপর তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম মহেন্দ্রবর্মনের পুত্র প্রথম নরসিংহবর্মন পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য 642 খ্রিস্টাব্দে চালুক্য রাজধানী বাতাপি আক্রমণ করেন এবং দ্বিতীয় পুলকেশীকে হত্যা করেন।
হিউয়েন সাঙের মতে দ্বিতীয় পুলকেশী দাক্ষিণাত্যের শ্রেষ্ঠ নরপতি ছিলেন। বস্তুত ক্ষুদ্র চালুক্য রাজ্যকে তিনি উত্তরে গুজরাট থেকে দক্ষিণে পাণ্ড্যরাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। দ্বিতীয় পুলকেশীকে ‘দক্ষিণাপথনাথ’ বলা চলে। পারস্য সম্রাট দ্বিতীয় খসরুর সঙ্গে তাঁর মৈত্রীর সম্পর্ক ছিল। হিউয়েন সাঙ তাঁর রাজসভায় উপস্থিত হন 641 খ্রিস্টাব্দে। তিনি দ্বিতীয় পুলকেশীর বিভিন্ন গুণাবলী, সামরিক শক্তি, রাজনৈতিক প্রতিভা, শাসনব্যবস্থা, দানশীলতা, প্রজাদের বীরত্ব এবং রাজ্যের শান্তি ও সমৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি নিজে শৈব হলেও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তিনি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করতেন।
দ্বিতীয় পুলকেশীর মৃত্যুর পর চালুক্য বংশের গৌরব স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে চালুক্য বংশের একটি শাখা বেঙ্গির চালুক্য বৎস রূপে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেছিল।