বান্দুং সম্মেলন (Bandung Conference) আফ্রো-এশীয় দেশগুলির মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলন ছিল। ১৯৫৫ সালে ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং প্রদেশে ২৯টি আফ্রো-এশীয় দেশ বান্দুং সম্মেলনে যোগদান করেছিল। এর মধ্যে ১৪টি দেশ নির্জেটি আন্দোলনের বেলগ্রেডের শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছিল। বান্দুং সম্মেলনের আগে মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধিরা সমবেত হয়ে বান্দুং সম্মেলনের সময় এবং সদস্যপদ সম্পর্কে কতকগুলি নীতি নির্ধারণ করে। এই সম্মেলনে স্থির হয় যে মুখ্য প্রতিনিধিরা জনসমক্ষে তাদের বক্তব্য রাখবেন। কোনো ব্যাপারে ঐকমত্য আছে কিনা তা নির্ণয় করবেন সম্মেলনের চেয়ারম্যান। এখানে কোনোরকম ভোটাভুটির ব্যাপার ছিল না। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সংগঠক রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত প্রতিনিধিদের তিনটি কমিটিতে ভাগ করা হয়। সম্মেলনের একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ইন্দোনেশিয়ার একজন প্রতিনিধি সেক্রেটারী জেনারেল পদে আসীন হন। বান্দুং সম্মেলনে যে সব বিষয়গুলি আলোচিত হয় তার মধ্যে মুখ্য বিষয় ছিল বিশ্বশান্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীতা, মানবাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্তরে সহযোগীতা।
বান্দুং সম্মেলনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি অনুসরণ করার প্রস্তাব নেওয়া হয়। এগুলি হল— (১) মৌলিক মানব অধিকার এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে সংযোজিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন (২) সকল রাষ্ট্রের সার্বভৌম অধিকার ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা স্বীকৃতি (৩) ছোটো বড়ো সকল বর্ণ ও জাতির সমান অধিকার (৪) অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা (৫) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদ অনুসারে একক বা যৌথভাবে সমস্ত জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি (৬) যৌথভাবে কোনো বৃহৎ শক্তির প্রতিরক্ষার স্বার্থ পালন থেকে বিরত থাকা এবং এক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য রাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি না করা (৭) অন্য দেশের স্বাধীনতাকে কোনো ভাবেই বিপন্ন না করা (৮) শান্তিপূর্ণ উপায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা (৯) পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতা (১০) আন্তর্জাতিক বায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।