ফিলিপ ভার্যান্ট সিমন্স একজন ত্রিনিদাদিয়ান ক্রিকেট কোচ ও প্রাক্তন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং অলরাউন্ডার। তিনি ফিল সিমন্স (Phil Simmons) নামে বিশ্ব ক্রিকেটে অধিক পরিচিত। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের হয়ে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে গেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং ও স্লিপ ফিল্ডিংয়ে দক্ষ ছিলেন। ফিল সিমন্স দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি কোচ হিসেবেও সাফল্য অর্জন করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, তাঁর ভাতিজা লেন্ডল সিমন্সও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
প্রাথমিক জীবন
ফিল সিমন্স ১৮ এপ্রিল ১৯৬৩ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর অ্যারিমায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল এবং তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর হয়ে ১৯৮৩ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করেন।
ঘরোয়া ক্যারিয়ার
ফিল সিমন্স ঘরোয়া পর্যায়ে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো (1983-2001), ইংলিশ দল ডারহাম (1989-1990), লিসেস্টারশায়ার (1994-1998) ও ওয়েলস মাইনর কাউন্টি (2000-2002), এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাব বর্ডার (1992-1993) ও ইস্টার্নসের (1996-2000) হয়ে খেলেছেন।
লিসেস্টারশায়ারের হয়ে নর্থহ্যাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ২৬১ রান করেন, যা তাঁর ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর। সেই ইনিংসে তিনি ৩৪টি চার এবং ৪টি ছক্কা মারেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ৫৬ উইকেট এবং ৩৫টি ক্যাচ নিয়ে ১,২৪৪ রান করেন, যা তাঁর দলকে তাঁদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে সাহায্য করে। একই বছর তিনি পিসিএ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কারও জিতেছিলেন। তিনি ১৯৯৭ সালে উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার হিসাবে মনোনীত হন। ১৯৯৮ সালে তাঁর অধিনায়কত্বে লিসেস্টারশায়ার দ্বিতীয়বার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা অর্জন করে।
- রান: ৩৫.৬১ গড়ে ১১,৬৮২ রান করেন, যার মধ্যে ২৪টি শতক এবং ৬৫টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে।
- উইকেট: ২৮.৬৮ গড়ে ২১৪ উইকেট নেন, যার মধ্যে পাঁচটি ৫-উইকেট রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
ফিল সিমন্স ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন। তিনি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার ছিলেন। তিনি ২৬টি টেস্ট এবং ১৪৩টি ওডিআই ম্যাচ খেলেছেন।
ফিল সিমন্সের টেস্ট ক্যারিয়ার তুলনামূলকভাবে কঠিন ছিল। ১৯৮৮ সালে ভারতের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়। তিনি অভিষেক টেস্টে ৮ এবং ১৪ রান করেন। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে মাত্র একটি সেঞ্চুরি ছিল, যা ১৯৯২-৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে তিনি তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম এবং শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরাজিত হয়েছিল। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ২২.২৬।
ফিল সিমন্স ওডিআই ক্রিকেটে অনেক বেশি সাফল্য পেয়েছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে তিনি মোট ১৪৩টি ওডিআই ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ওডিআই অভিষেক ম্যাচে ৫০ রান এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৯ রান করেন। ১৯৯২ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১০ রান করেন এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ ওভার, ৮ মেডেন, ৩ রান, ৪ উইকেট নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেন। ফিল সিমন্স তাঁর শেষ ওডিআই ম্যাচটি ১৯৯৯ সালের ৩০ মে ম্যানচেস্টারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন। ফিল সিমন্সের ওডিআই ক্যারিয়ারের প্রথম ও শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরাজিত হয়েছিল। তাঁর ওডিআই ক্যারিয়ারের ব্যাটিং গড় ছিল ২৮.৯৩ এবং তিনি মোট ৩৬৭৫ রান করেছিলেন।
কোচিং ক্যারিয়ার
ফিল সিমন্সের কোচিং ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। তিনি ২০০২ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। এখানে তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো:
জিম্বাবুয়ে: ২০০৪ সালে জিওফ মার্শের স্থলাভিষিক্ত হয়ে জিম্বাবুয়ের প্রধান কোচ নিযুক্ত হন। তবে, বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়কে গণআউট করার কারণে দলটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তিনি ২০০৫ সালে বরখাস্ত হন।
আয়ারল্যান্ড: ২০০৭ সালে অ্যাড্রিয়ান বিরেলের স্থলাভিষিক্ত হয়ে আয়ারল্যান্ডের কোচ হন। তাঁর মেয়াদে, আয়ারল্যান্ড বেশ কয়েকটি ট্রফি জিতেছে এবং আইসিসির প্রতিটি বড় ইভেন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। তাঁর নেতৃত্বে আয়ারল্যান্ড ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেন। ২০১৯ সালে পুনরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পদত্যাগ করেন।
আফগানিস্তান: ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
পাকিস্তান সুপার লিগ: ২০২৩ সালে করাচি কিংসের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউ গিনির ‘বিশেষজ্ঞ কোচ’ নিযুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশ: ২০২৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
কর্মজীবন পরিসংখ্যান
Competition | Test | ODI | FC | LC |
ম্যাচ | ২৬ | ১৪৩ | ২০৭ | ৩০৬ |
রান করেছেন | ১,০০২ | ৩,৬৭৫ | ১১,৬৮২ | ৮,৯২৯ |
ব্যাটিং গড় | ২২.২৬ | ২৮.৯৩ | ৩৫.৬১ | ৩৩.১৯ |
১০০/৫০ | ১/৪ | ৫/১৮ | ২৪/৬৫ | ১২/৫৪ |
সর্বোচ্চ স্কোর | ১১০ | ১২২ | ২৬১ | ১৬৬* |
বল করেছেন | ৬২৪ | ২,৮৭৬ | ১৩,১৯৬ | ৯,৬১৬ |
উইকেট | ৪ | ৮৩ | ২১৪ | ২১৪ |
বোলিং গড় | ৬৪.২৫ | ৩৪.৬৫ | ২৮.৬৮ | ৩৪.৪৯ |
৫ উইকেট | ০ | ০ | ৫ | ৩ |
১০ উইকেট | ০ | ০ | ০ | ০ |
সেরা বোলিং | ২/৩৪ | ৪/৩ | ৭/৪৯ | ৫/৩৩ |
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং | ২৬/- | ৫৫/- | ২৪১/- | ১৩৭/- |