কমন্স সভার স্পিকারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার স্পিকারের কতকগুলি পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার স্পিকার পদটি অষ্টাদশ শতাব্দীর ব্রিটিশ রীতিনীতির ওপর ভিত্তিশীল হলেও একে সম্পূর্ণ পৃথক সংস্থা বলা যেতে পারে।
(১) কমন্স সভার স্পিকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তাঁর নিরপেক্ষতা, কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার হলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলেন নেতা (“He is today one of the majority party leaders.”—R. Finer)। নির্বাচনের পর কমন্স সভার স্পিকার দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন, প্রতিনিধি সভার স্পিকার দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করেন। আসলে তিনি তাঁর দলের পক্ষে নীতি নির্ধারক ও আন্দোলন পরিচালক, গভীরতম অর্থে তিনি দলীয় এবং পক্ষভুক্ত (“He is one of the small knot of policy-makers and campaign leaders, partisan in the profoundest and most vociferous sense.”—Finer)।
(২) কমন্স সভার স্পিকার দলের সহানুভূতি ও ব্যক্তিগত ইচ্ছার উর্ধ্বে থেকে সভার কাজ পরিচালনা করেন, তিনি নিয়ম প্রয়োগ করেন। মার্কিন স্পিকার নিয়মের ব্যাখ্যায় ও প্রতিনিধি সভার কার্যপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণে দলীয় স্বার্থ সিদ্ধ করতে সচেষ্ট হন। সভার কার্যপরিচালনা ও কর্মসূচী নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে এমন বহু ক্ষমতা প্রতিনিধি সভায় স্পিকার প্রয়োগ করেন, যা ব্রিটেনে ক্যাবিনেটের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত (“He is actively and openly identified with his party’s organisation in the House, an indispensable cog in, the majority machine.”—Ogg & Ray)।
(৩) এই কারণের জন্য ব্রিটেনে কমন্স সভার স্পিকার পুনরায় নির্বাচিত হতে পারেন। আমেরিকার প্রতিনিধি সভার স্পিকারের ক্ষেত্রে দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনুযায়ী নির্বাচন হয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনিবার্য হয়ে পড়ে।
ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই পার্থক্যের মূল রাজনৈতিক কারণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ এবং ব্রিটেনে তার অনুপস্থিতি। কমন্স সভার স্পিকার সক্রিয় দলনেতা হলে কমন্স সভার নেতৃত্বে ক্যাবিনেটের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতেন, ফলে পার্লামেন্টারী শাসন ব্যবস্থার মূলনীতি ক্ষুন্ন হত। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে আইনসভায় ক্যাবিনেটের মত নেতৃত্বের সুযোগ নেই; সেই কারণে আইনসভায় একজন নেতা খুঁজতে হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের অন্যতম নেতা হিসাবে ভূমিকা গ্রহণের ফলে মার্কিন স্পিকার অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সমান ক্ষমতা ও মর্যাদা লাভ করেছেন (“I hold the most powerful position in the Government excepting of that President of the United States.”—John Nancy Garner, former Speaker)। ব্রিটেনে স্পিকার নিরপেক্ষ না হলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের প্রশ্ন উঠত না। নিরপেক্ষতাই তাঁর পুননির্বাচনের পথ প্রশস্ত করেছে। কমন্স সভার স্পিকারের ভূমিকা জানতে হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার স্পিকারকে ভুলে যাওয়া প্রয়োজন।