রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটেনের রাজা বা রানীর মধ্যে ক্ষমতা ও পদমর্যাদার তুলনা করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রেখে অনেকে মনে করেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রাজা বা রানীর মতই রাজত্ব করেন এবং শাসন ক্ষমতার ব্যবহার করে থাকেন। লর্ড ব্রাইস বলেছেন, “The President is the nearest and dearest substitute for a royal ideal which the Americans possess,” কিন্তু ব্রিটেনের জাতীয় জীবনে রাজার যে অশেষ সম্মানের স্থান তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির নেই।
ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের প্রতি জাতির শ্রদ্ধা রাজাকে পূজার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাছাড়া দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও রাজতন্ত্রের প্রাচীনতা একে মহিমামণ্ডিত করেছে। রাষ্ট্রপতির পক্ষে এইরূপ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া রাজার দল নিরপেক্ষ ভূমিকা, দীর্ঘদিন পদে অধিষ্ঠিত থাকবার অভিজ্ঞতা এবং তাঁর বিশেষ মর্যাদা শাসনে প্রভাব বিস্তারে বিশেষ সহায়তা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং তিনি দলীয় সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। ইংল্যান্ডের রাজা বা রানী উত্তরাধিকারসূত্রে সিংহাসন লাভ করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোন অন্যায় কাজের জন্য অভিযোগ আনা যায় না; সুতরাং এদিক থেকে ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীর মর্যাদা মার্কিন রাষ্ট্রপতির তুলনায় অধিক বলা যেতে পারে।
অন্যদিক থেকে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রাজা বা রানী অপেক্ষা অধিক ক্ষমতার অধিকারী; তিনিই প্রকৃত শাসক। ইংল্যান্ডের রাজা রাজত্ব করেন, তিনি শাসন করেন না। নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে প্রকৃত শাসন ক্ষমতা ক্যাবিনেটের হাতে ন্যস্ত। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও শাসন বিভাগের কর্তা, তিনিই ক্ষমতার ব্যবহার করে শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকেন। মার্ক হাইম্যান বলেছেন, “The American President not only reigns, he also rules.” সুতরাং প্রকৃত শাসক হিসাবে ইংল্যান্ডের রাজা বা রানী অপেক্ষা মার্কিন রাষ্ট্রপতি অধিক ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন।
ঐতিহাসিক কারণে ব্রিটেনের রানী বর্তমানে অনেক কম ক্ষমতা ও মর্যাদার অধিকারিণী। বিগত দুই শতাব্দীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সমস্ত পৃথিবীতে যে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তাঁর ফলে সাম্রাজ্যের প্রধান হিসাবে ব্রিটেনের রানী বিশেষ মর্যাদা ভোগ করতেন। বিংশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে মার্কিন একাধিপত্যের ফলে স্বাভাবিক কারণে পুঁজিবাদী দুনিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও প্রভাব অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।