১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনের পর লিবার্যাল দলের সমর্থন নিয়ে শ্রমিক দল র্যামসে ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে প্রথম জাতীয় সরকার গঠন করে। বিশ্ব মহামন্দা বিধ্বস্ত ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রথম জাতীয় সরকার বিশেষ কিছু করতে পারেনি। করের পরিমাণ বৃদ্ধি ও সরকারি কর্মচারীদের সুযোগসুবিধা হ্রাসের প্রশ্নে মন্ত্রীসভার সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় ম্যাকডোনাল্ড পদত্যাগ করেন ও মন্ত্রীসভা ভেঙে যায়। অতঃপর রক্ষণশীল দলের বল্ডউইন, লিবার্যাল দলের স্যামুয়েল হোর ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বিতীয় জাতীয় সরকার (National Government) গঠনের পরিকল্পনা করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ আগস্ট, র্যামসে ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে দ্বিতীয় জাতীয় সরকার গঠিত হয়। শ্রমিক দল বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ও তাঁর অনুগামীদের দল থেকে বহিষ্কার করে।
জাতীয় সরকার (১৯৩১-১৯৩৯ খ্রি:)
জাতীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী স্লোডেন সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও বেকারদের অনুদান হ্রাস করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে পাউন্ডের দাম কমে যায়। এ-ব্যাপারে জনসমর্থন যাচাই করার জন্য ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে সরকার সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেয়। ‘জাতীয় সরকার’ প্রার্থীরা বিপুল সংখ্যায় জয়লাভ করেন।
র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড (১৯৩১-৩৫ খ্রি:)
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড দ্বিতীয় জাতীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। জাতীয় সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলি হল— (১) অবাধ বাণিজ্যনীতি ত্যাগ করে বিদেশি পণ্যের উপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক বসানো হয়। (২) আয়কর কমানো হয়। (৩) বেকারদের অনুদান ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। (৪) কিছু কৃষি পণ্যের মূল্যের ন্যূনতম গ্যারান্টি দেওয়া হয়। (৫) শিল্প শ্রমিকদের মজুরি ও শিল্প পণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট করা হয়। এইসব ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বেকার সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়। অসুস্থ ম্যাকডোনাল্ড ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা পঞ্চম জর্জের কাছে পদত্যাগ করেন।
বল্ডউইন (১৯৩৫-৩৭ খ্রি:)
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে রক্ষণশীল দলের নেতা বল্ডউইন তৃতীয় জাতীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময় ইউরোপে হিটলার ও মুসোলিনির উত্থানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিলতর হয়। ইটালি ইথিওপিয়ার উপর আক্রমণ হানে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্যামুয়েল হোর ও ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রী পিয়ের লাভাল ইথিওপিয়ার ব্যাপারে এক গোপন চুক্তি করেন। এই চুক্তির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। স্যামুয়েল হোর পদত্যাগ করেন। হিটলার রাইন অঞ্চল দখল করেন। স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করেন। বল্ডউইন ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা ষষ্ঠ জর্জের কাছে পদত্যাগ করেন।
নেভিল চেম্বারলেন (১৯৩৭-৩৯ খ্রি:)
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে নেভিল চেম্বারলেন চতুর্থ জাতীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি বৈদেশিকনীতি-সংক্রান্ত বিষয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, বৈদেশিক বাণিজ্যের সাফল্যের মধ্য দিয়েই কেবল ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্ভব। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের বৈদেশিক বাণিজ্যে সাফল্য ছিল সর্বোচ্চ। স্বল্প মজুরি এবং উচ্চকর সত্ত্বেও এ সময়ে বেকারত্ব হ্রাস পায়। অস্ত্র তৈরির জন্য অনেকগুলি কারখানাও গড়ে ওঠে।
এই সময় হিটলার, মুসোলিনি ও স্পেনের জেনারেল ফ্রাঙ্কোর কার্যকলাপ ইউরোপীয় রাজনীতিতে প্রলয়ের বার্তা বয়ে আনে। এই অবস্থায় নেভিল চেম্বারলেন তোষণনীতি গ্রহণ করেন। নেভিল চেম্বারলেন ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের 3 সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেন। নরওয়েতে ব্রিটিশ বাহিনীর পরাজয়ের পর ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের নেভিল চেম্বারলেন রাজা ষষ্ঠ জর্জের কাছে পদত্যাগ করেন। উইনস্টন চার্চিল তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন, যিনি যিনি যুদ্ধ মন্ত্রণালয় গঠন করেন।