মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা বা কংগ্রেস দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভা (House of Representatives) নামে পরিচিত। প্রতিনিধি সভা জাতীয় প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতেই গঠিত হয়। কিন্তু প্রতিনিধি সভা জনপ্রিয় কক্ষ হলেও উচ্চকক্ষ সিনেট সভা বা রাষ্ট্রপতির ন্যায় ক্ষমতা ও মর্যাদা ভোগ করে না।
মার্কিন প্রতিনিধি সভার গঠন [Composition]
মার্কিন প্রতিনিধি সভা দু’বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৪৩৫। সাধারণত সাড়ে তিন লক্ষ জনসংখ্যা পিছু একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু ভোটাধিকারের ভিত্তি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যগুলিতে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। নির্বাচক হবার যোগ্যতা এবং নির্বাচন পদ্ধতি সকল রাজ্যে সমান নয়। কোন কোন অঙ্গরাজ্যে করপ্রদান ভোটাধিকারের ভিত্তি হিসাবে স্বীকৃত। কোথাও আবার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে ভোটাধিকারের মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ গ্রহণ করা হয়। সংবিধানের ২৩তম সংশোধনে (১৯৬৪ সালে) বলা হয়েছে যে, করপ্রদানে অক্ষমতার জন্য কোন নাগরিককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। পঞ্চদশ এবং ঊনবিংশ সংশোধন অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতি, বর্ণ, নারীত্ব প্রভৃতির অজুহাতে ভোটাধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না। ১৯৭২ সালের ২৬তম সংবিধান সংশোধন আইন দ্বারা ১৮ বৎসর বয়স্ক সকল নারী-পুরুষের ভোটদানের অধিকার স্বীকার করা হয়েছে।
সাধারণত প্রতিনিধি সভার নির্বাচনের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলিকে কয়েকটি নির্বাচনী জেলায় বিভক্ত করা হয় এবং প্রত্যেক জেলা থেকে একজন করে সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনী এলাকা বা জেলা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দলগত সুবিধা লাভের জন্য এক পদ্ধতির প্রচলন লক্ষ্য করা যায় বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় ‘জেরিমেন্ডারিং’ (Gerrymandering) নামে পরিচিত। ম্যাসাচুসেটস-এর গভর্নর জেরির নাম অনুসারে এই পদ্ধতির নামকরণ হয়েছে। দলের নির্বাচনী সাফল্যের দিকে দৃষ্টি রেখে তিনি নির্বাচনী এলাকা সংগঠনের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। বর্তমানে অবশ্য এই কৌশলের গুরুত্ব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রতিনিধি সভার সদস্যকে অবশ্যই ২৫ বছর বয়স্ক হতে হবে, ৭ বছর যাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং যে অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার বাসিন্দা হতে হবে। কোন সরকারী পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি প্রতিনিধি সভার সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন না। প্রতিনিধি সভার প্রত্যেক সদস্য বৎসরে ১,৫০,০০০ ডলার বেতন পেয়ে থাকেন। একজন করণিক নিয়োগ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক জিনিস ক্রয়ের জন্য বছরে করমুক্ত অতিরিক্ত ২৫,০০০ ডলার পান। তা ছাড়া বিনা খরচে চিঠিপত্র প্রেরণ এবং নির্দিষ্ট হারে ভ্রমণভাতা পেয়ে থাকেন। অনেক সংবিধানবিদের মতে প্রতিনিধি সভা পৃথিবীর মধ্যে সর্বপেক্ষা ব্যয়বহুল আইন প্রণয়ন সংস্থা।
মার্কিন প্রতিনিধি সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনসভার অন্যতম কক্ষ হিসাবে জনপ্রতিনিধি সভা মূলতঃ আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ভোগ করে। (১) প্রতিনিধি সভায় যে কোন বিল উত্থাপন করা যায়। (২) আইন প্রণয়ন ব্যাপারে সাধারণভাবে প্রতিনিধি সভা সিনেট সভার ন্যায়ই ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। কিন্তু অর্থবিল সম্পর্কে প্রতিনিধি সভা বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। অর্থবিল উত্থাপন করবার অধিকার সিনেট সভার নেই; তা প্রতিনিধি সভার একচেটিয়া অধিকার। (৩) কোন বিল সম্পর্কে কংগ্রেসের উভয় পক্ষের মতবিরোধ দেখা দিলে উভয় কক্ষের সদস্য নিয়ে গঠিত ‘কনফারেন্স কমিটিতে’ (Conference Committee) তার মীমাংসা হয়। (৪) তা ছাড়া ইমপিচমেন্ট পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও উৎকোচ গ্রহণ প্রভৃতির অভিযোগ আনবারও একমাত্র অধিকার প্রতিনিধি সভার। (৫) শাসনতন্ত্রের সংশোধনও নতুন অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে প্রতিনিধি সভা সিনেট সভার সঙ্গে একযোগে কাজ করে। (৬) এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন প্রার্থী উপযুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে না পারলে প্রতিনিধি সভা প্রথম তিনজন প্রার্থীর মধ্যে গোপন ব্যালট প্রথায় রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করে।
মার্কিন প্রতিনিধি সভার কাজ মূলতঃ কমিটিগুলির মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনসভার ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভাতেও কমিটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে (“The real work of Congress is transacted not on the floor of the two chambers but in the committees, which have been called little legislatures.” — Joseph P. Harris)। প্রতিনিধি সভার বিভিন্ন কমিটির সংখ্যা প্রায় ৬০, স্থায়ী কমিটির সংখ্যা বর্তমানে ২০। কমিটিগুলি দলীয় ভিত্তিতে সংগঠিত হয় এবং প্রত্যেক দলই কমিটিতে নিজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখবার জন্যে সচেষ্ট থাকে।