ভারতীয় উপমহাদেশে তথা বাংলায় সাময়িক পত্রের সূচনা হয়েছিল ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’ পত্রিকার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বাংলা ভাষায় সাময়িক পত্রের প্রকাশ ঘটতে সময় লেগেছিল প্রায় সাঁইত্রিশ বছর। ১৮১৮ খ্রীস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনারীদের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় দ্বিভাষিক মাসিকপত্র ‘দিগদর্শন’ এবং সাপ্তাহিক পত্র ‘সমাচার দর্পণ’। এছাড়া মিশন প্রেসের কম্পোজিটর গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ১৮১৮ সালে প্রকাশ করেন ‘বঙ্গাল গেজেটি’। সূচনা পর্বের এই তিনটি সাময়িক পত্রের মধ্যে ‘দিগদর্শন’ যথার্থ সাময়িক পত্রের চরিত্রধর্ম অর্জন করতে পারেনি। ছাত্রপাঠ্য জ্ঞাতব্য বিষয়সমূহে ‘দিগদর্শনে’র পৃষ্ঠাগুলি পূর্ণ হয়ে থাকতো। প্রথম বাঙালী উদ্যোগে বাংলা ভাষার সাময়িকপত্র হিসাবে গঙ্গাকিশোরের ‘বঙ্গাল গেজেটি’র ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও পত্রিকাটি দীর্ঘজীবী হয়নি, এমনকি তার কোনো কপিও উদ্ধার করা যায় নি। একমাত্র ‘সমাচার দর্পণ’ পত্রিকা দীর্ঘকাল সাময়িক পত্র হিসাবে বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সমাজ-রাজনীতির প্রতিফলন ঘটিয়ে এসেছে এবং আদর্শ সংবাদপত্র বা সাময়িকপত্র হিসাবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
‘সমাচার দর্পণ’ ছিল মূলত মিশনারীদের উদ্যোগে পরিচালিত। ফলে সরকারী নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনা বা বিতর্ক অতি সাবধানে তাদের এড়িয়ে চলতে হতো। হিন্দু ধর্ম বা অন্য ধর্ম বিষয়ে বিরুদ্ধ আলোচনা ‘সমাচার দর্পণে’ প্রকাশিত হলেও আলোচনার প্রতিবাদী প্রত্যুত্তর এই পত্রিকায় প্রকাশের অবকাশ ছিল না। কলমকে তরবারি হিসাবে ব্যবহার করে বাংলা সাময়িকপত্রের সেই প্রতিবাদী চরিত্রের যথার্থ উন্মেষ ঘটেছিল রামমোহনের হাতে।
পাশ্চাত্য ভাষা-দর্শন-ইতিহাসের শিক্ষা ছাড়া নানা প্রাচ্য ভাষা বিদ্যা-দর্শনে পারঙ্গম ও বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী চেতনায় উদ্ভাসিত-হৃদয় রামমোহন রায়ের কলকাতা আগমন ১৮১৫ সালে। ১৮১৫ সালে স্থাপিত হয় বাঙালী-টোলায় রামমোহনের ‘আত্মীয়সভা’। ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘হিন্দু কলেজ’ এবং ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি। রামমোহনের বিতর্কমূলক প্রতিবাদী কণ্ঠ তৈরি করে নিল উপযুক্ত দৃঢ় ও ক্ষুরধার গদ্যশৈলী। ‘সমাচার দর্পণে’ হিন্দুধর্মের বহুদেববাদকে আক্রমণ করে লেখা রচনাসমূহের প্রতিবাদে রামমোহন বেদান্ত ব্যাখ্যা ও একেশ্বরবাদের ব্যাখ্যা করতে চাইলে তা ‘সমাচার দর্পণে’ প্রকাশিত হল না। তখন রামমোহন শিবপ্রসাদ শর্মা ছদ্মনামে প্রথমে প্রকাশ করেন ১৮২১ খ্রীস্টাব্দে ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’। পরে কলুটোলা নিবাসী তারাচাঁদ দত্ত ও ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় প্রকাশ করলেন ‘সম্বাদ কৌমুদি’ (১৮২১)।
‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ পত্রিকার পৃষ্ঠায় মিশনারীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যেমন একদিকে রামমোহনের লেখনী গর্জে উঠল, অন্যদিকে তেমনি প্রাচীনপন্থী হিন্দুদের প্রচলিত কুপ্রথা-সমূহের বিরুদ্ধেও ক্ষুরধার যুক্তিতর্ক উপস্থিত করলেন তিনি। একযোগে মিশনারী ও রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের বিরুদ্ধাচরণ করে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক বিদ্রোহী পুরুষ হিসাবে বিবেচিত হলেন রামমোহন। বিশেষ করে বর্বর মধ্যযুগীয় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রস্তাব লিখে ‘সম্বাদ কৌমুদী’ বাংলা তথা ভারতীয় সমাজেতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য আন্দোলন উপস্থিত করলেন।
বাংলা সাপ্তাহিক ‘সম্বাদ কৌমুদী’ ছিল প্রধানত রামমোহনের প্রবল লেখনী যুদ্ধের মুখপত্র। ১৮২১ খ্রীস্টাব্দের ৪ঠা ডিসেম্বর সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকার প্রথম প্রকাশ। পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন তারাচাঁদ দত্ত ও ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সম্পাদনা ও রচনার ব্যাপারে সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকায় প্রধান ভূমিকায় ছিলেন রামমোহন রায়। ফলে বুর্জোয়া আধুনিকতার উদারনৈতিক ও যুক্তিশীল মনোভাব ‘সম্বাদ কৌমুদী’ পত্রিকায় প্রতিফলিত হয়েছিল। বিশেষ করে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ‘সম্বাদ কৌমুদী’ ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। কিন্তু সতীদাহ বিষয়ে তীব্র আক্রমণাত্মক রচনা প্রকাশিত হওয়ায় কিছুটা রক্ষণশীল ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সম্বাদ কৌমুদী’র সংশ্রব ত্যাগ করেন ও রক্ষণশীল সমাজের মুখপত্র হিসাবে ১৮২২ সালে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ প্রকাশ করেন। ‘সম্বাদ কৌমুদী’ ১৮২২ সালে বন্ধ হয়। অবশ্য পরে ১৮২৩ থেকে ‘সম্বাদ কৌমুদী’ আবার প্রকাশিত হয়ে প্রায় দশ বছর চলেছিল।
রামমোহনের সমকালে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকতা ও সাময়িকপত্রকে পুষ্ট করেছেন। ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ ধর্মসভার মুখপত্র হিসাবে গোড়া ও রক্ষণশীল হিন্দুদের সমর্থনে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তবে আধুনিক সমাজেতিহাসে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’র ভূমিকাটি নিঃসন্দেহে প্রাচীনপন্থী রক্ষণশীলতার কলঙ্কচিহ্ন বহন করছে।
রামমোহন-ভবানীচরণের পর সাময়িক পত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য নাম ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকা এবং সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্য বিকাশে যিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তিনি কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। তবে ইতিমধ্যে আরো কয়েকটি সাময়িক পত্রের প্রকাশ ঘটেছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রামচন্দ্র মিত্র সম্পাদিত জীবজন্তু-বিষয়ক পত্রিকা ‘পশ্বাবলী’ (১৮২২), কৃষ্ণমোহন দাসের ‘সংবাদ তিমির নাশক’ (১৮২৩), ‘বেঙ্গল হেরল্ড’ পত্রিকার বাংলা সংস্করণ ‘বঙ্গদূত (১৮২৯) ইত্যাদি। ‘বঙ্গদূত’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন নীলরতন হালদার এবং এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তিত্ববর্গ।
ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধের উল্লেখযোগ্য পত্রিকাগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ ‘সংবাদ প্রভাকর’। পাথুরিয়াঘাটার জমিদার ঠাকুর পরিবারের যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুরের আর্থিক সহায়তায় উনিশ বৎসরের যুবক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সম্পাদনায় ১৮৩১ খ্রীস্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারী প্রথম প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘সংবাদ প্রভাকর’। যোগেন্দ্রমোহনের মৃত্যুতে ১৮৩২ সালে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৮৩৬ সালের ১০ আগস্ট বারত্রয়িক পত্রিকা রূপে ‘সংবাদ প্রভাকর’ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৩৯ সালের ১৪ জুন ‘সংবাদ প্রভাকর’ হয়ে ওঠে বাংলা প্রথম দৈনিক পত্রিকা। ১৮৫৯ খ্রীস্টাব্দে ঈশ্বর গুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতার সম্পাদনাতে পত্রিকাটি প্রকাশিত হত।
‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে প্রথম বাংলার কবি সাহিত্যিকদের প্রতিভার অভূতপূর্ব সমাবেশ ঘটেছিল। বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় ঈশ্বরচন্দ্র সঞ্চার করতে পেরেছিলেন ভিন্নতর স্বাদ। এই পত্রিকাতে ঈশ্বর গুপ্ত ছদ্মনাম নিয়ে ‘রিপোর্টজ’ ধর্মী রচনা প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র, দীনবন্ধু মিত্র, রঙ্গলাল প্রমুখ নবযুগের বহু কবি সাহিত্যিকের হাতে খড়ি হয়েছিল ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার পৃষ্ঠায়।
শুধু সাংবাদিকতাই নয়, ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার পৃষ্ঠাতে ঈশ্বর গুপ্ত সূচনা ঘটিয়েছিলেন কবি জীবনী ও কবিকর্মের বিশ্লেষণমূলক রচনা প্রকাশের। এই পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল পুরোনো কবিওয়ালাদের ও পাঁচালিকারদের জীবনী, যা এক উল্লেখযোগ্য গবেষণার স্বাক্ষর বহন করে। এছাড়া সাংবাদিকতা ও কাব্য কবিতার মধ্য দিয়ে নবযুগের মানসিক দ্বন্দ্বটিকে সার্থকভাবে প্রকাশ করেছিলেন ঈশ্বর গুপ্ত ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার পৃষ্ঠায়। স্বাজাত্যবোধ, স্বাধীনতাবোধের বিকাশেও এই পত্রিকা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। তাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এবং সাময়িক পত্রের ইতিহাসে ঈশ্বর গুপ্ত ও তাঁর ‘সংবাদ প্রভাকর’ এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার সমকালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘সম্বাদ সুধাকর’ (১৮৩১), ‘বিজ্ঞান সেবধি’ (১৮৩২), ‘জ্ঞানান্বেষণ’ (১৮৩১), ‘জ্ঞানোদয়’ (১৮৩১), ‘সম্বাদ সারসংগ্রহ’ (১৮৩১), ‘সম্বাদ রত্নাবলী’ (১৮৩২), ‘সম্বাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়’ (১৮৩৫), ‘সম্বাদ ভাস্কর’ (১৮৩৯) প্রভৃতি।
বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে ‘সংবাদ প্রভাকর’-এর পর যে সাময়িক পত্রটির নাম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, সেটি হল ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’। দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ স্বভাবতই রামমোহনের সমাজসংস্কার, দেশীয় উন্নতিবিধান বিষয়ক ভাবনায় শৈশবাবধি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ১৮৩৯ খ্রীস্টাব্দে তিনি বেদান্ত প্রতিপাদ্য ব্রহ্মবিদ্যা প্রচারের উদ্দেশ্যে স্থাপন করেন ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’। পরে ১৮৪৩ খ্রীস্টাব্দে ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’র মুখপত্র হিসাবেই প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী মাসিক পত্রিকা।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ঘনিষ্ঠ যুবক অক্ষয়কুমার দত্ত ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। অক্ষয়কুমারও ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হলেও বিজ্ঞানমনস্ক পুরুষ ছিলেন। বেদান্ত প্রতিপাদ্য ব্রহ্মবিদ্যার প্রচার ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য হলেও পরিচালক দেবেন্দ্রনাথ ও সম্পাদক অক্ষয়কুমার পত্রিকাটিকে প্রথমাবধি ব্যাপকতর উদ্দেশ্য সাধনে নিয়োজিত করেছিলেন। সাহিত্য, দর্শন, সমাজতত্ত্ব, বিজ্ঞান ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়ই এই পত্রিকায় প্রকাশিত হত। বিশেষত ‘বিজ্ঞান সেবধি’ পত্রিকার পর বিজ্ঞান-বিষয়ক রচনা প্রকাশের ক্ষেত্রে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল, যার প্রধান কৃতিত্ব ছিল সম্পাদক অক্ষয়কুমার দত্তের।
বাংলা গদ্যে ব্যক্তি প্রধান গদ্যের সূচনা রামমোহন রায়ের হাতে। সেই ধারার বিস্তারপর্ব ‘তত্ত্ববোধিনী’তেই। অক্ষয় কুমার, দেবেন্দ্রনাথ ছাড়াও এই পত্রিকার লেখক গোষ্ঠীর মধ্যে ছিলেন বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ণ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনকি রবীন্দ্রনাথ। তৎকালীন শিক্ষা, সমাজসংস্কার, মদ্যপান বিরোধিতা, বিধবা বিবাহ এমনকি রাজনীতি বিষয়ক রচনাও এই পত্রিকায় প্রকাশিত হত।
১৮৪৩ থেকে ১৮৫৫ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন অক্ষয়কুমার দত্ত। পরে বিভিন্ন সময়ে সম্পাদক হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অযোধ্যানাথ পাকড়াশী, হেমচন্দ্র বিদ্যারত্ন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যোগেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখেরা। সর্বমোট ৯১ বছর এই পত্রিকা চলেছিল। শেষতম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৩ খ্রীস্টাব্দে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে, সমাজ- ভাবনায় এই পত্রিকা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বাংলা সাহিত্যকে প্রায় উনিশ শতকের স্বর্ণশীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল যে পত্রিকা, সেটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শন’ (১৮৭২)। কিন্তু বাংলা সাময়িকপত্রের সূচনালগ্ন থেকে বঙ্গদর্শনের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত যে কজন বাঙালীর নেতৃত্বে ও পরিচালনায় বাংলার সমাজ-ভাষা-সাহিত্য-স্বাজাত্যবোধ আধুনিক চিন্তা ভাবনা ও বিতর্ক-দ্বন্দ্ব লালিত ও পূর্ণতা সন্ধানী হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য, রামমোহন রায়, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয় কুমার দত্ত প্রমুখ। সাময়িক পত্র হিসাবে নাম করা যায় ‘বঙ্গাল গেজেটি, ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, ‘সংবাদ প্রভাকর’ এবং ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’।