ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রধান বিষয় ছিল কাঞ্চির পল্লব এবং বাদামির চালুক্যদের মধ্যে রাজনৈতিক আধিপত্যের জন্য দীর্ঘ লড়াই। তুঙ্গভদ্রা নদীর উত্তরে ছিল চালুক্য এবং দক্ষিণে পল্লব রাজ্য। কৃষ্ণা ও তুঙ্গভদ্রা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পল্লব-চালুক্য দ্বন্দ্বের (Pallava and Chalukya Conflict) সূত্রপাত হয়, যা দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসকে প্রায় দুশো বছর ধরে প্রভাবিত করেছিল।
পল্লব-চালুক্য দ্বন্দ্বের ধারা (Pallava and Chalukya Conflict)
পল্লব-রাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মন এবং চালুক্য-রাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সংঘাতের মধ্যে দিয়ে পল্লব-চালুক্য দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই সময় থেকেই চালুক্য এবং পল্লবদের মধ্যে এক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূচনা হয়। একে অপরের শক্তি বৃদ্ধিতে এঁরা পরস্পরের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন। চালুক্য-রাজ দ্বিতীয় পুলকেশী পল্লব-রাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মনকে পরাজিত করে বেঙ্গী অধিকার করেন (৬১০ খ্রিঃ)।
প্রথম মহেন্দ্রবর্মনের পুত্র প্রথম নরসিংহবর্মন পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য চালুক্য রাজধানী বাতাপি আক্রমণ কyরেন। তিনি দ্বিতীয় পুলকেশীকে পরাজিত ও নিহত করে চালুক্য রাজধানী বাতাপি বা বাদামি ধ্বংস করেন (৬৪২ খ্রিঃ)। প্রথম নরসিংহবর্মন বাতাপিকোণ্ড বা বাতাপি বিজেতা উপাধি ধারণ করেন। এইভাবে সমগ্র দক্ষিণ ভারতে পল্লবদের প্রাধান্য স্থাপিত হয়।
প্রথম নরসিংহবর্মনের রাজত্বের শেষদিকে চালুক্য-রাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর পুত্র প্রথম বিক্রমাদিত্যে চালুক্য রাজ্য থেকে সকল পল্লব সেনা বিতাড়িত করেন। তিনি তুঙ্গভদ্রা অতিক্রম করে পল্লব রাজ্য আক্রমণ করেন এবং পল্লব-রাজ প্রথম পরমেশ্বরবর্মনকে পরাজিত করে রাজধানী কাঞ্চি অধিকার করেন (৬৫৫ খ্রিঃ)। শেষ পর্যন্ত তুঙ্গভদ্রা নদী দুই রাজ্যের সীমানা বলে চিহ্নিত হয়। প্রথম পরমেশ্বরবর্মন অবশ্য শেষ পর্যন্ত কাঞ্চি পুনর্দখলে সক্ষম হন। তাঁর
চালুক্য-রাজ বিজয়াদিত্য পল্লব রাজ্য আক্রমণ করেন এবং পল্লব-রাজ দ্বিতীয় পরমেশ্বরবর্মনকে পরাজিত করে কর প্রদানে বাধ্য করেন। এরপর বিজয়াদিত্যের পুত্র দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য পল্লব-রাজ দ্বিতীয় নন্দীবর্মনকে কাঞ্চি দখল করেন এবং কাঞ্চির সিংহাসনে দ্বিতীয় নন্দীবর্মনের প্রতিদ্বন্দ্বী চিত্রমায়াকে প্রতিষ্ঠা করেন। চিত্রমায়া প্রায় কুড়ি বছর পল্লব রাজ্য শাসন করেন। এরপর থেকে পল্লব-চালুক্য শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
অবশেষে চালুক্যদের সামন্ত রাষ্ট্রকূট বংশীয় দন্তিদুর্গ চালুক্য বংশের শেষে রাজা দ্বিতীয় কীর্তিবর্মনকে পরাজিত করে চালুক্য বংশের উচ্ছেদ সাধন করেন। অন্যদিকে চোল ও পাণ্ডাদের আক্রমণে পল্লব শক্তির রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়।