বর্তমানে বিশ্বায়ন বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়, যার প্রতিটি আন্তঃসংযুক্ত বিশ্ব গঠনে একটি স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করে। বিশ্বায়নের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে বিশ্বায়নের কয়েকটি রূপের সন্ধান পাওয়া যায়।
1. অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন: সমগ্র বিশ্বজুড়ে একই ধরনের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের আবির্ভাব ঘটেছে। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ধারণানুযায়ী সমস্ত দেশের অর্থনীতি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মূলধন ও প্রযুক্তির বিশাল প্রবাহ পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্যকে উৎসাহিত করে। জাতীয় অর্থনীতি সমূহকে নতুনভাবে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়ে সমগ্র বিশ্বে এক অখণ্ড বাজার প্রবর্তন করেছে।
একুশ শতকের বিশ্ব অর্থনীতির মুখ্য পরিচালক ও নিয়ন্তা হিসেবে দৈত্যাকৃতি বহুজাতিক সংস্থা, শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বৃহদাকার আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা হল সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাবান। উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশসমূহের অর্থনীতি ও উন্নয়ন এদের নীতি ও নির্দেশের ওপর নির্ভরশীল। এইভাবে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের পথ সুদৃঢ় হচ্ছে।
2. রাজনৈতিক বিশ্বায়ন: জাতীয় রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্কোচন, ন্যূনতম রাষ্ট্রের ধারণার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর সঙ্কোচন, শ্রমিক সংগঠনের ব্যাপারে জনগনের অনীহা—রাজনৈতিক বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের পথ ধরে সুদূর অতীতে যেভাবে অনুন্নত রাষ্ট্রগুলির ওপর সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিকতাবাদী রাষ্ট্রগুলি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, অনুরূপভাবে বর্তমানে বিশ্বায়নের পথ ধরে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলির ওপর আধিপত্য কায়েম করে রাজনৈতিক বিশ্বায়নকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
3. সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন: বিশ্বায়নের প্রবক্তারা মনে করেন যে, সমগ্র বিশ্বে সংস্কৃতিগত সমরূপতাই হল সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের মূলকথা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিগমগুলি বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্রের বহুবিধ সাংস্কৃতিক প্রবাহকে জাতিগত ও ভৌগোলিক গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। আর একাজে প্রধান সহায়ক হয়েছে অন্তর্জাল (Internet) ব্যবস্থার মতো অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমগুলি। এর ফলে স্বল্প ব্যয়ে পৃথিবীর সব দেশের মানুষ পারস্পরিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে।
উপসংহার: উন্নত বা উন্নয়নশীল সকল দেশেই বিশ্বায়ন আজ পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশ্বায়নে কুফল দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্বায়ন আজ ধনী ও দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যই শুধু বৃদ্ধি করেনি, উন্নয়নশীল দেশগুলির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবনধারাকে বিনষ্ট করেছে।