১৯৯১ সালের ২২শে ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পনেরটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মলাভ করে। মাইকেল ম্যাকফোর (Michel Macfore) তাঁর “Russia’s Revolution” গ্রন্থে বর্তমান রাশিয়াকে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র বলে চিহ্নিত করেছেন। ১৯৯৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর সমগ্র রাশিয়ার জনগণের রেফারেন্ডামের মাধ্যমে নতুন রাশিয়ার সংবিধান সৃষ্টি ও প্রণীত হয়। অধুনা যে সমস্ত রাশিয়ার সংবিধানের বৈশিষ্ট্য (Features of Constitution of Russia) খুঁজে পাওয়া যায় তার মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য।
রাশিয়ার সংবিধানের বৈশিষ্ট্য (Features of Constitution of Russia)
(১) প্রস্তাবনা (Preamble): প্রস্তাবনায় জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ স্বীকার করা হয়েছে। অতীতের স্মৃতির উল্লেখ থাকলেও কোথাও মার্কসবাদ বা সমাজবাদের উল্লেখ লক্ষ্য করা যায় না।
(২) মৌলিক নীতি (Fundamental Principles): সংবিধানের প্রথম অধ্যায়ে মৌলিক নীতির উল্লেখ রয়েছে। প্রথম ধারা থেকে শুরু করে ১৬ নং ধারা পর্যন্ত মৌলিক নীতির উল্লেখ আছে।
- মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতাকে চূড়ান্ত মূল্য প্রদান করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার স্বীকৃতি, তার অনুসরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- জনগণের হাতেই সরকার গঠনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ডেপুটিদের নির্বাচিত করতে পারেন।
- ১২ নং ধারায় আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার মেনে নেওয়া হয়েছে।
- বর্তমানে রাজনৈতিক বিভিন্নতার ফলে বহুদলীয় ব্যবস্থা সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।
- রাশিয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ১৪ (১) ধারা রাষ্ট্র কোনও ধর্মকে বিশেষ প্রশ্রয় প্রদান করবে না।
- শাসনতান্ত্রিক সুবিধা বিধানের জন্য আইনসভা, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে পৃথক ও সাবলম্বী করার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
- ৭ নং ধারায় রাশিয়ার জনগণের মূল্যবান জীবন রক্ষা ও উন্নতিকল্পে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জনগণ ও শ্রমিকের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ন্যূনতম মজুরি স্থির করা হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রের মাধ্যমে পরিবারকে সাহায্য প্রদান, মাতৃত্ব, পিতৃত্ব ও শৈশবের সুরক্ষার কথাও বলা হয়েছে।
(৩) সংবিধানের প্রাধান্য (Supremacy of Constitution): রাশিয়ার সংবিধান সম্পূর্ণভাবে এক লিখিত সংবিধান। রাশিয়ার সংবিধানের ১৩৭টি ধারা রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে মৌলিক নীতি, দ্বিতীয় অধ্যায়ে নাগরিক অধিকার, তৃতীয় থেকে সপ্তম অধ্যায়ে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রীয় গঠন, রাশিয়ার সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভা, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এবং বিচারসভার উল্লেখ রয়েছে। অষ্টম অধ্যায়ে সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের ১৫নং ধারায় রাশিয়ার ভূখণ্ডে সংবিধানকে চূড়ান্ত ক্ষমতাসম্পন্ন ও সর্ববিষয়ে সর্বাধিক আইনসংগত অধিকার বিশিষ্ট আখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
(৪) আন্তর্জাতিকতাবাদ (Internationalism): ১৫ নং ধারার ৪ নং অনুচ্ছেদে ঘোষিত হয়েছে যে, সর্বজনস্বীকৃত আন্তর্জাতিক আইনের স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাশিয়ার সংবিধানকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে বর্তমান আন্তর্জাতিক আইনের কোন দ্বন্দ্ব দেখা দিলে রাশিয়া বিশ্বস্বীকৃত আন্তর্জাতিক আইন অনুসারেই নিজেদের সাংবিধানিক বিধি রচনা করবে। একই সঙ্গে ১৭ নং ধারানুসারে নাগরিক অধিকারের ঘোষণা ও সংরক্ষণ আন্তর্জাতিক আইনের বিধি অনুসারে অনুসৃত হবে। ৬৩নং ধারানুসারে আন্তর্জাতিক আইনের বিধিনুসারে রাশিয়ার সংবিধান বিদেশী নাগরিক ও গৃহচ্যুত নাগরিককে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করতে পারে।
(৫) পরিবেশ-চেতনা ও সংরক্ষণ (Environmentalism): পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশ আইন অনুসরণ ও পরিবেশ চেতনার বৃদ্ধির ওপর সংবিধান বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। প্রতিটি নাগরিককে পরিবেশ বিষয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে এবং তথ্য সংগ্রহে উৎসাহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ৪২ নং ধারানুসারে পরিবেশ আইন ভঙ্গজনিত কারণে কোনও ব্যক্তির ক্ষতি হলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হবে। ৫৮ নং ধারানুসারে প্রতিটি নাগরিককে পরিবেশ সংরক্ষণে এবং সযত্নে প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে বলা হয়েছে। ৭২ নং ধারানুসারে জমি, জল, জঙ্গল ইত্যাদি সংক্রান্ত আইন রচনার সময় পরিবেশ সম্বন্ধে সজাগ থাকার কথা বলা হয়েছে।
(৬) যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা (Federal System): সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যবস্থার নিরিখে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রবর্তিত হয়েছে। ভারতবর্ষের ন্যায় ক্ষমতা বণ্টিত হলেও ৭১ নং ধারানুসারে সংবিধান সংশোধন, অঙ্গরাজ্যের আইন পরিবর্তন, বিদেশ নীতি প্রণয়ন ও অনুসরণ, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাজনিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জাতীয় অর্থনীতি ও মুদ্রা ব্যবস্থা প্রভৃতি কেন্দ্রের হাতেই সীমাবদ্ধ। ৭২ নং ধারানুসারে নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্র-সম্পত্তির সীমারেখা, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, পরিবেশ রক্ষা, বৈদেশিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলিকে যুগ্ম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই যৌথভাবে এই কাজগুলি পালন করবে। সর্বোচ্চ আদালতকে সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা বলা হয়েছে।
(৭) রাষ্ট্রপতি-শাসিত ব্যবস্থা (President-rule System): ৮০ নং ধারানুসারে ফরাসী সংবিধানের ন্যায় রাশিয়ার রাষ্ট্রপতিকে দেশের প্রধান শাসক হিসাবে ঘোষণা করেছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতির ন্যায় চার বছরের জন্য তিনি নির্বাচিত হন। ৮৮ নং ধারানুসারে ফরাসী ও মার্কিন রাষ্ট্রপতির ন্যায় রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে জরুরি ক্ষমতা রয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতিকে ৯৩ নং ধারানুসারে ইমপিচ করা যায়। রাষ্ট্রপতি ডুমার কাছে প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন, পরপর দুবার সেই নাম ডুমা থেকে স্বীকৃতি না পেলে তিনি আইনসভা ভেঙ্গে দিতে পারেন। প্রতিটি মন্ত্রীই ডুমার কাছে দায়বদ্ধ।
(৮) মৌলিক কর্তব্য (Fundamental Duties): নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৫৭-৬০ নং ধারাগুলিতে জনগণের মৌলিক কর্তব্যের বর্ণনা আছে। প্রতিটি নাগরিক স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রকে তার প্রদেয় কর ও অনাদায়ী রাজস্ব প্রদান করবে। প্রতিটি জনগণ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে যত্নের সঙ্গে রক্ষা করবে এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে। পিতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদান করা এক মহান কর্তব্য। পূর্বের সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত সংবিধানের তুলনায় বর্তমানের মৌলিক কর্তব্যের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ও গুরুত্বহীন।
(৯) দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা (Bicameral Legislature): সংবিধানের পঞ্চম অধ্যায়ে ৯৪ নং ধারা থেকে ১০৯ ধারা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। রাশিয়ার আইনসভা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। আইনসভার সদস্যগণ জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। প্রথম কক্ষটি The Council of Federation এবং দ্বিতীয় কক্ষটি The State Duma নামে পরিচিত। প্রথম কক্ষে মার্কিন সিনেটের ন্যায় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের শাসনব্যবস্থা থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন—একজন আইনসভা থেকে ও অন্যজন সেই রাজ্যের প্রশাসন থেকে প্রথম কক্ষে নির্বাচিত হন। প্রথম কক্ষে ১৭৮ জন সদস্য আছে। দ্বিতীয় কক্ষে অর্থাৎ ডুমাতে সমস্ত রাশিয়ার সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের নীতি অনুসারে (অর্থাৎ ২১ বছর বয়সে) ৪৫০ জন নির্বাচিত হন। ডুমার সদস্যদের কার্যকাল ৪ বছর। শিক্ষাদান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অন্যান্য উদ্ভাবনীমূলক কাজ ব্যতীত ডুমার সদস্যগণ অন্য কাজে লিপ্ত থাকতে পারেন না।
(১০) নিরপেক্ষ বিচারালয় (Judicial Impartiality): সংবিধানের সপ্তম অধ্যায়ের ১১৮-১২৯ নং ধারায় বিচারালয়ের বর্ণনা আছে। ১৯ জন বিচারক বিশিষ্ট রাশিয়ার সাংবিধানিক আদালত (The Constitution Court) দেশের রাষ্ট্রপতি, আইনসভা, মন্ত্রীপরিষদ, সুপ্রিম কোর্ট-এর প্রস্তাবক্রমে সংবিধান সংক্রান্ত সমস্যার পর্যালোচনা করে থাকে। এই প্রসঙ্গে আদালতের হাতে বিচারসভার পুনর্মূল্যায়নের ক্ষমতাটি উল্লেখযোগ্য। ১১৯ নং ধারানুসারে ২৫ বছর ও তদুর্ধে সুচিন্তিত নাগরিকদের বিচারক হিসাবে মনোনীত করা হয়। ১২৮ নং ধারানুসারে সাংবিধানিক আদালত, সুপ্রিম কোর্ট, উচ্চ আদালত এই সকল আদালতের বিচারকগণ আইনসভার প্রথম কক্ষ অর্থাৎ The Council of Federation কর্তৃক রাষ্ট্রপতির প্রস্তাব অনুসারে মনোনীত হন।
(১১) স্বায়ত্তশাসন (Autonomy): অষ্টম অধ্যায়ে ১৩০-১৩৩ নং ধারায় আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ঘোষণা রয়েছে। ১৩০ (১) ধারানুসারে জনগণের স্বাধীন সত্তা, আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান ও আঞ্চলিক সম্পত্তির প্রকৃত ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। রেফারেন্ডামের সাহায্যে আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানের কথা বলা হয়েছে। জনগণের দ্বারাই আঞ্চলিক প্রশাসক নির্বাচিত হবে।
(১২) সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি (Procedure of Amendment): নবম অধ্যায়ে ১৩৪-১৩৭ নং ধারায় সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত নীতির উল্লেখ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় সংশোধন পদ্ধতি দুধরনের—প্রস্তাবের স্তর (Proposal Stages) এবং সমর্থিত স্তর (Approval Stages)। ভারতের ন্যায় সংবিধানের কিছু অংশ সংশোধনের জন্য দুষ্পরিবর্তনীয় ও অন্যান্য অংশের জন্য সুপরিবর্তনীয় নীতি অনুসরণ করা হয়। সুতরাং সংশোধন পদ্ধতি সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয়তার সংমিশ্রণ।
(১৩) মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights): সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ১৭ নং ধারা থেকে ৬৪ নং ধারায় নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার বর্ণনা রয়েছে। ২৯ নং ধারায় সবাইকে আইনের চোখে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে। পুরুষ ও মহিলার সমানাধিকার স্বীকৃত। প্রতিটি নাগরিকের জীবনের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণের অধিকার, পরিবার সচেতনার উল্লেখ রয়েছে। বাধ্যতামূলক শ্রমের পরিবর্তে ৩৭ নং ধারায় স্বেচ্ছাশ্রমের কথা বলা হয়েছে। গৃহ নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার স্বীকৃত।
মূল্যায়ন (Evaluation): বর্তমানে রাশিয়ায় বহুদলীয় ব্যবস্থা সমগ্র রাজনৈতিক পরিকাঠামোর পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পেরেস্ত্রৈকার পর তদানীন্তন সোভিয়েতে দুশোর বেশী রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০টি। রাষ্ট্রপতি-শাসিত সংসদীয় কাঠামোর উপস্থিতি বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে। রাশিয়াতে বৌদ্ধধর্মকে বর্তমানে তৃতীয় ধর্মীয় শক্তি আখ্যা দেওয়া হয়। খ্রীস্টধর্ম, ইসলাম ধর্ম ও জনগণের সাহায্য পুষ্ট বৌদ্ধ ধর্ম দেশের সমাজনীতি ও রাজনীতিকে পরোক্ষে পরিচালিত করে চলেছে। খ্রীস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নতুন রাশিয়া যুগসন্ধিক্ষণে দণ্ডায়মান।
Q1. রাশিয়ার শাসন ব্যবস্থার প্রকৃতি কী ছিল?
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়া সাধারণতন্ত্রের আইনসভার সিদ্ধান্তক্রমে নাম পরিবর্তন করে রুশ যুক্তরাষ্ট্র করা হয়েছে। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর থেকে রাশিয়াতে নতুন সংবিধান কার্যকর হয়। সংবিধানের ১১০-১১৭ নং ধারায় রুশ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বর্ণনা রয়েছে। বর্তমানে এটি একটি উদারনৈতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার লিখিত দলিল। সংবিধানটি দুষ্পরিবর্তনীয়। গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা এখানে বলা হয়েছে এবং সংবিধানের প্রাধান্য স্বীকৃত। সংবিধানের বিভিন্ন প্রকার সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টিত হয়েছে। ৭ নং ধারানুযায়ী রাজা, ভূখণ্ড, অঞ্চল, যুক্তরাষ্ট্রীয় শহর এবং স্বয়ংশাসিত অঞ্চলকে নিয়ে রুশ যুক্তরাষ্ট্র গঠিত।
Q2. রুশ যুক্তরাষ্ট্রে কি সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
রাশিয়ার সংবিধানের ১৫ (১) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, রাশিয়ার ভূখণ্ডে সংবিধান হল চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। যে কোনো আইনের সঙ্গে সাংবিধানিক আইনের বিরোধ ঘটলে সাংবিধানিক আইন বলবৎ থাকবে। দেশের সমস্ত আঞ্চলিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে সংবিধানের নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
Q3. রাশিয়ার নতুন সংবিধানের কাঠামোটি যুক্তরাষ্ট্রীয় না এককেন্দ্রিক?
রাশিয়ার নতুন সংবিধানের কাঠামোটি যুক্তরাষ্ট্রীয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমস্ত বৈশিষ্ট্যই সংবিধানে রয়েছে, যেমন—একটি কেন্দ্রীয় সরকার, আঞ্চলিক সরকার, ক্ষমতা বণ্টন, লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান, নিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের অবস্থিতি ইত্যাদি।
Q4. রাশিয়ার সর্বোচ্চ আদালতের নাম কী?
সুপ্রিম কোর্ট।
Q5. রাশিয়ার কোন সংস্থাটি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা ভোগ করে?
সাংবিধানিক আদালত ভোগ করে।
Q6. রাশিয়ার বর্তমান সংবিধানটি কবে থেকে কার্যকর হয়?
১৯৯৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে।
Q7. রাশিয়ার বর্তমান সংবিধানটি পাস হয় কবে?
১৯৯২ সালে পাস হয়।