আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ভারতবর্ষ বিশ্বের এক প্রাচীনতম দেশ। ভারতবর্ষ বা ভারত বলতে ১৯৪৭ সালের পূর্ববর্তী অবিভক্ত ভারত বা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে বোঝানো হয়েছে। প্রাচীন সাহিত্য রামায়ণ, মহাভারত ও বিভিন্ন পরাণে ভারতকে ‘দেবভূমি’, ‘পুণ্যভূমি’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে ‘ভারত’ (Bharat) এবং ‘ইন্ডিয়া’ (India) নাম দুটি উল্লেখ রয়েছে।
পুরাণ অনুসারে, প্রাচীনকালে ঋষভের পুত্র ‘ভরত’ নামে এক রাজার নামানুসারে আমাদের দেশের নাম হয় ‘ভারতবর্ষ’ এবং ভারতবাসীকে বলা হয় ‘ভারত-সন্ততি’ বা ‘ভারতের সন্তান’।
বিষ্ণুপুরাণ উল্লেখ করেছে যে, যে দেশ সমুদ্রের উত্তরে ও হিমালয়ের দক্ষিণে, তার নাম ভারতবর্ষ। এখানে যাঁরা বাস করেন তাঁরা ‘ভারতী’ বা ‘ভারত সন্ততি’ নামে পরিচিত।
আধুনিক ঐতিহাসিক ডঃ রামশরণ শর্মা বলেন যে, ভরত নামে এক প্রাচীন উপজাতির নাম অনুসারে এই দেশের নাম হয় ভারতবর্ষ এবং ভাতবর্ষের মানুষকে বলা হয় ‘ভরত-সন্ততি’ (বা ভরতের উত্তর-পুরুষ)।
প্রাচীন হিন্দু বিশ্বতত্ত্ববিদগণ (Cosmogrphers) সমগ্র পৃথিবীকে সাতটি মহাদ্বীপে বিভক্ত করেন। জম্বুদ্বীপ হল সপ্তদ্বীপের অন্যতম। জম্বুদ্বীপ আবার কয়েকটি ‘দ্বীপ’ বা ‘বর্ষ’ নিয়ে গঠিত এবং এর মধ্যে একটি হল ভারত নামে ‘বর্ষ’। অশোকের শিলালিপি, বিভিন্ন বৌদ্ধগ্রন্থ, মহাভারত ও পুরাণে জম্বুদ্বীপের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতের বর্ণনায় জম্বুদ্বীপ হল চারটি মহাদেশ-সূচক দ্বীপের একটি এবং এর একটি বর্ষ বা অংশের নাম ভারতবর্ষ। বিভিন্ন পুরাণেও জম্বুদ্বীপের এক বর্ষ হিসেবে ভারতবর্ষের নাম করা হয়েছে।
আমাদের দেশ বিদেশিদের কাছে ‘ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত। এই নামটি সংস্কৃত ‘সিন্ধু’ থেকে উদ্ভূত। বিদেশিরা সিন্ধু নদের তীরবর্তী ভারতীয়দের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয়েছিল এবং সিন্ধু নদের নাম অনুসারেই তারা দেশটির নামকরণ করে। প্রাচীন পারসিকরা ‘সিন্ধু’-কে উচ্চারণ করত ‘হিন্দু’। এ থেকেই সে যুগে ভারতীয়দের সাধারণ নাম হয় ‘হিন্দু’ এবং কালক্রমে এ দেশের নাম হয় ‘হিন্দুস্তান’ বা হিন্দুদের বাসভূমি। শাসানি বংশের সম্রাট প্রথম শাপুর ‘নকশ-ই-রুস্তম’ শিলালিপিতে সিন্ধুকে হিন্দুস্তান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রিক ও রোমানরা ‘হিন্দু’-কে উচ্চারণ করত ‘ইন্দু’ (Indus) বলে। প্রাচীন এই ‘ইন্দুস’ থেকেই আধুনিক ‘ইন্ডিয়া’ নামের উৎপত্তি।