ভারত মহাসাগরের স্রোতের (Indian Ocean Current) গতিপ্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। মৌসুমি বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার জন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুপ্রবাহের দিকের পরিবর্তন হয়। এইরূপ পরিবর্তনের কারণে ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে সমুদ্র স্রোতের ঋতুভিত্তিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। ভারত মহাসাগরীয় স্রোতগুলির বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হল—
(১) শীতল কুমেরু স্রোত বা পশ্চিমা স্রোত: কুমেরু স্রোত আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ অংশ দিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। প্রবল পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা তাড়িত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। প্রধান শাখাটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করে। দ্বিতীয় শাখাটি অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূল ধরে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়।
(২) শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলিয় স্রোত: কুমেরু স্রোতের দ্বিতীয় শাখাটি অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূল দিয়ে উত্ত অগ্রসর হয়। এই স্রোত শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলিয় স্রোত নামে পরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে বেঁকে গিয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্নোতের সাথে মিশে যায়। পশ্চিম অস্ট্রেলিয় স্রোত প্রথমে শীতল থাকে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রবেশ করলে তা উষ্ণ হয়ে ওঠে।
দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়। এর মধ্যে দুটি শাখা মাদাগাস্কারে উভয় দিক নিয়ে দক্ষিণে অগ্রসর হয় এবং তৃতীয় শাখাটি উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের যে অংশটি মাদাগাস্কারের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয় তা মাদাগাস্কার স্রোত নামে পরিচিত। দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের দ্বিতীয় শাখাটি মাদাগাস্কার দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে মোজাম্বিক প্রণালীর মধ্য নিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এটি মোজাম্বিক স্রোত নামে পরিচিত। মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক স্রোত আরও দক্ষিণে উত্তমাশা অন্তরীপের কাছে মিলিত হয়ে আগুলহাস স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এই স্রোত আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হলে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিকে বেঁকে গিয়ে কুমেরু স্রোতের সাথে মিশে যায়।
(৩) উষ্ণ উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত: উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে নিরক্ষরেখা উভয় দিকে পশ্চিমমুখী দুটি স্রোতের সৃষ্টি হয়। উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত স্রোত উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ও দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত স্রোত দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে পরিচিত। দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত দক্ষিণ থেকে আগত পশ্চিম অস্ট্রেলিয় স্রোত ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আগত অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূল দিয়ে প্রবাহিত স্রোতের মিলনের ফলে সৃষ্টি হয়। উভয়ই উষ্ণ স্রোত।
(8) উষ্ণ সোমালি স্রোত: দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের যে শাখাটি আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের সোমালী ল্যান্ডের পাশ দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়, তা সোমালি স্রোত নামে পরিচিত। নিরক্ষরেখ অতিক্রম করে এই স্রোত আরব সাগরে প্রবেশ করলে মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
(৫) উষ্ণ মৌসুমি স্রোত: ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে মৌসুমি বায়ুর দিক ও গতির পরিবর্তন হয়। সেই জন্য সমুদ্র স্রোতের গতি ও দিকের পরিবর্তন হয়। তাই সৃষ্টি হয় বিপরীত (ক) গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্রোত ও (খ) শীতকালীন মৌসুমি স্রোত।
(ক) গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্রোত: গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সোমালি স্রোত বর্ধিত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আরব সাগরে প্রবেশ করে। সেখান থেকে এই স্রোত ভারতের পশ্চিম উপকূল ধরে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ দিকে পৌঁছায়। সেখান থেকে উত্তর দিকে বাঁক নিয়ে ভারতের পূর্ব উপকূল ধরে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর অংশে স্থলভাগে বাধা পেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে আন্দামান সাগরের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে সুমাত্রার পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে বেঁকে গিয়ে নিরক্ষীয় স্নোতের সাথে মিলিত হয়।
(খ) শীতকালীন মৌসুমি স্রোত: শীতকালীন মৌসুমি স্রোত গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্লোতের বিপরীতে প্রবাহিত হয়। এই স্রোত মালয় ও সুমাত্রার মাঝখান থেকে উৎপন্ন হয়ে আন্দামান সাগর অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে এবং এখান থেকে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর পথ ধরে বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়ে সোমালি ল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছায়। ভারত মহাসাগর গ্রীষ্মমণ্ডলে অবস্থিত বলে স্রোতগুলি উষ্ণ হয়।
Q1. মাদাগাস্কার স্রোত কোন মহাসাগরে বয়ে যায়?
মাদাগাস্কার স্রোত ভারত মহাসাগরে বয়ে যায়।
Q2. আগুলহাস স্রোত কোন মহাসাগরে দেখা যায়?
আগুলহাস স্রোত ভারত মহাসাগরে দেখা যায়।
Q3. সোমালি স্রোত কোন মহাসাগরে দেখা যায়?
সোমালি স্রোত ভারত মহাসাগরে দেখা যায়।
Q4. ভারত মহাসাগরের দুটি উষ্ণ স্রোতের নাম লেখ।
ভারত মহাসাগরের দুটি উষ্ণ স্রোতের নাম হল দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ও মোজাম্বিক স্রোত।