রাজনৈতিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রীয় কার্যে নাগরিকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণের সুযোগ বোঝায়। নাগরিকগণই সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুযোগ লাভ করতে পারে। কোন বিদেশী রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে না। রাজনৈতিক অধিকার বলতে বর্তমানে সরকার গঠন ও সরকার নিয়ন্ত্রণ করবার সুযোগ বোঝায়। খাতা-কলমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, সুতরাং পছন্দমত সরকার গঠনের সুযোগ জনগণের থাকা একান্তই কাম্য।
(১) বসবাসের অধিকার (Right of residence): স্থায়িভাবে বসবাসের অধিকার রাজনৈতিক অধিকার। বসবাসের অধিকার নাগরিকগণই ভোগ করে থাকে, বিদেশী রাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে অস্থায়িভাবে কোন রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারে। বিদেশী যে অধিকার ভোগ করতে সমর্থ হয় না, অথচ নাগরিক ভোগ করতে পারে। তাই রাজনৈতিক অধিকার—এই দৃষ্টিভঙ্গীতে বসবাসের অধিকার প্রতি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকগণ রাজনৈতিক অধিকার হিসাবে ভোগ করতে সমর্থ।
(২) বিদেশে থাকাকালীন নিরাপত্তার অধিকার (Right to protection while staying abroad): বিদেশে থাকাকালীন নাগরিক নিজ রাষ্ট্রের দ্বারা নিরাপত্তার অধিকার ভোগ করতে পারে। বিদেশী রাষ্ট্র কোন রাষ্ট্রের নাগরিকের প্রতি অন্যায় আচরণ করলে নাগরিক তার নিজ রাষ্ট্রের নিকট প্রতিকার বা প্রতিবিধান দাবি করতে পারে। নিরাপত্তার অধিকার বলবৎ করবার জন্য প্রয়োজন হলে রাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে।
(৩) ভোটদানের অধিকার (Right to vote): ভোটাধিকার রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। গণতন্ত্রের উদ্ভব ও প্রসারের সঙ্গে এই অধিকারও বিশেষ সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রতিনিধিমূলক গণতন্ত্রে ভোটদানের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণই সরকার গঠন করেন। সুতরাং এই অধিকার দ্বারা সরকার গঠনের এবং সরকার অপসারণের ক্ষমতা নাগরিকের হাতে অর্পিত। বর্তমানে সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছে। অবশ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক, দেউলিয়া, উন্মাদ এবং বিদেশীর ভোটাধিকার কোন রাষ্ট্রই স্বীকার করে না।
(৪) নির্বাচিত হবার অধিকার (Right to be elected): ভোটদানের অধিকারের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশগ্রহণের বা প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হবার অধিকার থাকাও প্রয়োজন। যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিক আইনসভা বা স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হতে পারবে। প্রত্যেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই নাগরিকের এ অধিকার স্বীকৃত। প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রে যোগ্যতার মানদণ্ডের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
(৫) সরকারী চাকরিতে নিযুক্ত হবার অধিকার (Right to hold public office): সরকারী চাকরিতে সকলের নিযুক্ত হবার অধিকার গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার অপর একটি প্রতিফলন। সরকারী চাকরি কোন ব্যক্তি বা শ্রেণীর একচেটিয়া অধিকার বলে গণ্য হতে পারে না। আতি, ধর্ম, বর্ণ-স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে সরকারী কাজে সকলের যোগদানের সুযোগ থাকা কাম্য। অবশ্য বিশেষ চাকরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত বা বৃত্তিগত যোগ্যতার অধিকারী হবার প্রয়োজন।
(৬) সমালোচনার অধিকার (Right to criticise): সরকারী কাজের সমালোচনার অধিকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় একান্তই অপরিহার্য। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমিতি গঠনের অধিকার প্রভৃতি পৌর অধিকারের পরিপুরক হিসাবেই সরকারের নিকট আবেদন করবার এবং সরকারকে সমালোচনার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। জনমতের ওপর নির্ভরশীল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এ অধিকার সকল সময়েই কাম্য। এর অভাবে কেবলমাত্র নির্বাচনের সময় ছাড়া অন্য কোন সময়ে নাগরিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে না। সুতরাং রাষ্ট্র নাগরিকের প্রতি কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে নাগরিকের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনার অধিকার থাকবে। সমালোচনার অধিকার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হলেও কার্যত তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য। প্রয়োজন হলে অন্যায় ও দমনমূলক আইন নীতির সমালোচনা রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য হতে পারে না। জনমতের সমালোচনাই সরকারকে সঠিক গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করে।