গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ১৯৮২ সালের সংবিধানে একজন রাষ্ট্রপতি (President) উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের প্রথম সংবিধানে একজন সভাপতি (Chairman) থাকবেন বলে উল্লেখ করা হয়। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৭৫ সালে প্রবর্তিত সংবিধানে সভাপতি পদ বিলোপ করা হয়। ১৯৭৮ সালের সংবিধানে কোন রাষ্ট্রপতি ছিল না। এই কারণে জাতীয় গণ-কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির (Standing Committee) সভাপতির ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৮২ সালের সংশোধিত সংবিধানে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি (President) পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।
চীনের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ ও কার্যকাল
নতুন সংবিধানের ৭৯ ধারায় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতির নিয়োগ ও কার্যকাল সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস (National People’s Congress) কর্তৃক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ভোটাধিকার এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবার অধিকারপ্রাপ্ত ৪৫ বছর বয়স্ক যে কোন চীনা নাগরিক রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। সাধারণভাবে তাদের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর। সংবিধানে আরও বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি হিসাবে কেউ একাদিক্রমে দুবার অর্থাৎ ১০ বছরের অধিক কাল কাজ করতে পারবেন না।
চীনের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী
১৯৮২ সালের সংশোধিত চীনা সংবিধানের ৮০ এবং ৮১ ধারায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী (Powers and Functions of the President of China) উল্লেখ করা হয়েছে। কার্যাবলীর বিচারে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বলা যেতে পারে। ৮০ ধারায় বলা হয়েছে—রাষ্ট্রপতি জাতীয় গণ কংগ্রেস বা স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী (১) আইন জারি করতে পারেন; (২) প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রীগণ, রাষ্ট্রীয় পরিষদের সদস্যগণ (State Councillors), বিভিন্ন দপ্তর বা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিগণ, প্রধান হিসাব পরীক্ষক (Auditor General) ও সাধারণ সম্পাদককে (Secretary General) নিয়োগ ও অপসারণ করতে পারেন; (৩) রাষ্ট্রীয়, পদক ও সাম্মানিক উপাধি প্রদান করতে পারেন; (৪) বিশেষ ক্ষমা প্রদর্শনের আদেশ দিতে পারেন; (৫) সামরিক আইন (martial law) জারি করতে পারেন; (৬) যুদ্ধকালীন অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন; এবং (৭) সৈন্যবাহিনী মোতায়েন করবার আদেশ দিতে পারেন।
৮১ ধারায় রাষ্ট্রপতির আন্তর্জাতিক বিষয়ে দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি—(১) গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের পক্ষে বিদেশী কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের গ্রহণ করবেন; (২) জাতীয় গণ-কাগ্রেসের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশে পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন রাষ্ট্রদূতগণকে নিয়োগ ও প্রত্যাহার করতে পারেন; (৩) বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ধি ও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদন করতে ও বাতিল করতে পারেন। ১৯৮২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির এই সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষমতার বর্ণনা করা হয়েছে।
উপসংহার
১৯৮২ সালের সংবিধানে বলা হয়েছে যে, নতুন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থেকে কাজ সম্পাদন করবেন। নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির সভাপতি অস্থায়ীভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি হিসাবে কাজ করবেন। ১৯৫৪ সালের শাসন প্রবর্তনের প্রায় ২৮ বছর পর ১৯৮২ সালের সংবিধানে চীনের রাষ্ট্রপতি পদের প্রবর্তন নিঃসন্দেহে নতুন সংবিধানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে। ১৯৮৮ সালের গণ কংগ্রেসের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইয়াং শাংকুন (Yang Shangkun) এবং চীনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং (Xi Jinping)।