অ্যাংলো সাক্সন যুগে রাজাকে সাহায্য করবার জন্য প্রধান পরিষদ বা উইটেনাগেমট (Witenagemot) ছিল। নর্মান যুগে রাজাকে পরামর্শ দেবার এবং সাহায্য করবার জন্য যে প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয় তা হল ক্ষুদ্রতর পরিষদ (Curia Regis)। অভিজাত শ্রেণির ব্যক্তিগণ এবং রাজপরিবারের পদস্থ কর্মচারীদের মধ্য থেকে রাজা পরিষদের সদস্যদের মনোনীত করতেন। প্রাথমিক অবস্থায় এই পরিষদের শাসন ও বিচার সম্পর্কিত কাজের জন্য দুভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। টিউডর ও স্টুয়ার্ট রাজাদের আমলে প্রিভি কাউন্সিলের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বিশেষ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কাউন্সিলের সদস্যগণ পার্লামেন্টের নিকট দায়ী ছিলেন না, দায়ী ছিলেন রাজা ও রানীর নিকট। কালক্রমে কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে রাজা কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে নিয়ে একটি ছোট মন্ত্রণাসভা গঠন করতেন। দ্বিতীয় চার্লস তাঁর আস্থাভাজন কয়েকজন নিয়ে যে মন্ত্রণাসভা গঠন করেন, তাকে ক্যাবাল (CABAL) বলা হত। এই সভাবেই ক্যাবিনেটের জনক বলে গণ্য করা যায়। রাজার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে গঠিত এই পরামর্শ সভাকে পার্লামেন্ট সুনজরে দেখতে পারে নি। রাজার মন্ত্রণাদাতাদের মনোনীত করবে পার্লামেন্ট, এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য পার্লামেন্ট আন্দোলন চালাতে লাগলো। ১৭০০ সালে আইন প্রণয়ন করে (Act of Settlement, 1700) পার্লামেন্ট স্থির করে যে, প্রিভি কাউন্সিলের যাবতীয় কাজ প্রিভি কাউন্সিলের মধ্যেই সম্পাদন করতে হবে। ধীরে ধীরে ক্যাবিনেট প্রথার উদ্ভবের ফলে প্রিভি কাউন্সিলের গুরুত্ব কমতে থাকে।
বর্তমানে প্রিভি কাউন্সিলের সংগঠন: ক্যাবিনেট সভার উদ্ভবের ফলে মন্ত্রণাসভা হিসাবে কাউন্সিলের গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে প্রিভি কাউন্সিল নামেমাত্র প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত হয়েছে। এর অধিকাংশ ক্ষমতা ক্যাবিনেট এবং কিছু পরিমাণ ক্ষমতা বিভিন্ন শাসন বিভাগের নিকট হস্তান্তরিত হয়েছে। ক্যাবিনেট সদস্যদের সাধারণতঃ প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য করা হয়। তা ছাড়া আনইজ লর্ড, বিদেশে নিযুক্ত রাজপ্রতিনিধি, ক্যান্টারবেরী ও ইয়র্কের আর্চবিশপ এবং কমন্সসভার স্পীকারও কাউন্সিলের সদস্য হন। সাহিত্য, কলা, বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি ক্ষেত্রে খ্যাতনামা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন। বর্তমানে কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত দেশগুলি থেকে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ৩০০-এর বেশি এবং এঁরা সকলেই রাজা বা রানী কর্তৃক আজীবন সদস্য হিসাবে মানোনীত হন।
প্রিভি কাউন্সিলের কাজ: সমগ্র প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যদের কখনও আহ্বান করা হয় না। রাজা বা রানীর অভিষেক বা মৃত্যুর সময় সাধারণতঃ কাউন্সিলের সদস্যরা মিলিত হন। প্রিভি কাউন্সিলের সভায় তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম (Quorum) হয়। ক্যাবিনেট যে সমস্ত কার্যাবলী স্থির করে সেগুলিতে প্রিভি কাউন্সিল আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি দেয়। রাজকীয় ঘোষণা (Royal Proclamation) এবং সপরিষদ রাজাদেশই (Orders-in-Council) হল প্রিভি কাউন্সিলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অবশ্য এই কাজও আনুষ্ঠানিক ভিন্ন আর কিছু নয়। শাসন সংক্রান্ত কাজে বা পরামর্শ দাতা পরিষদ হিসাবে কোন ভূমিকা না থাকলেও বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে, বিশেষতঃ চার্চের মামলা এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত উপনিবেশগুলির দেওয়ানী মামলার শুনানীর ব্যাপারে প্রিভি কাউন্সিলের বিচার বিভাগীয় কমিটির (Judicial Committee of Privy Council) বিশেষ ভূমিকা আছে। লর্ড চ্যান্সেলার, ভূতপূর্ব লর্ড চ্যান্সেলার এবং আপীল লর্ডদের (Lords of Appeal) নিয়ে একটি বোর্ডের মাধ্যমে বিচার হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও রাজা বা রানীকে পরামর্শ দেওয়া ছাড়া কাউন্সিলের অন্য কোন ভূমিকা নেই।