প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে (Question-Answer Method) একজন প্রশ্ন করে, অন্যজন উত্তর প্রদান করে থাকে। প্রশ্নের সাহায্যে শিক্ষার্থীর মনকে নতুন পাঠের প্রতি আগ্রহান্বিত করা, উপস্থাপিত বিষয়ের প্রতি অধিক মনোযোগী করে তোলা, সত্যলব্ধ জ্ঞানের পরীক্ষা, গৃহে পাঠচর্চার জন্য শিক্ষার্থীকে নির্দেশ দেওয়া প্রভৃতি শিক্ষাকর্ম পরিচালনার জন্য প্রশ্নের সাহায্য নেওয়া হয়। বস্তুত ইতিহাস, ভূগোল, বাংলা, ইংলিশ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন প্রভূতি বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষণ প্রচেষ্টাকে সার্থক করে তোলা যায়। তাই আমাদের দেশে প্রায় সমস্ত বিদ্যালয়েই প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি বর্তমানে অনুসৃত হচ্ছে।
গ্রিসের চিন্তানায়ক, দার্শনিক সক্রেটিস প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সত্যে উপনীত হওয়ার পন্থা অবলম্বন করতেন। আমাদের দেশে বিদ্যালয়গুলিতে পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে শিক্ষাদান রীতি পরিচিত।
প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য (Features)
(১) প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে শিক্ষকগণ প্রশ্ন করেন বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বুচি, অভিরুচি, কৌশল, বোধ বা সামর্থ্য জানার জন্য।
(২) শিক্ষার্থী পাঠ সংক্রান্ত বিষয়ে কৌতূহল নিবৃত্তির জন্য ও সঠিক জ্ঞান লাভের জন্য প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষকের কাছে তার আগ্রহ তুলে ধরে।
(৩) প্রশ্ন করার সময় শিক্ষককে প্রশ্নাবলির মৌলিক উদ্দেশ্য ও তার সঠিক উত্তর সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়।
(৪) প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে উত্তর গ্রহণের সময় শিক্ষককে সতর্ক হয়ে সঠিক ও উদ্দেশ্যমুখী, দ্ব্যর্থহীন, প্রত্যক্ষ ও তথ্যাশ্রয়ী উত্তরদানের জন্য শিক্ষার্থীকে পরিচালনা করতে হবে।
(৫) প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করালে শিক্ষার্থীর উত্তর সূত্র ধরে শিক্ষককে পরবর্তী প্রশ্ন উত্থাপন করতে হয়।
(৬) শিক্ষার্থীকে উত্তরদানের সমর্থ করে তোলার জন্য উত্তরদানের সহায়ক প্রশ্ন উপস্থাপন করা শিক্ষকের বাঞ্ছনীয়।
প্রশ্নের ধরন (Question Type)
উদ্দেশ্য ও প্রয়োগের বৈশিষ্ট্যের বিচারে প্রশ্ন নানা ধরনের হতে পারে। যেমন—(i) পরীক্ষামূলক প্রশ্ন (Testing Questions), (ii) শিক্ষামূলক প্রশ্ন (Training Questions) এবং (iii) শাসনমূলক প্রশ্ন (Disciplinary Questions)।
(i) পরীক্ষামূলক প্রশ্ন:
পরীক্ষামূলক প্রশ্নকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
- প্রস্তুতিমূলক বা পূর্বজ্ঞান পরীক্ষা প্রশ্ন।
- পাঠানুসরণ মূলক প্রশ্ন।
- পুনরালোচনামূলক প্রশ্ন।
- পাঠের ফলাফল পরিমাপক প্রশ্ন।
(ii) শিক্ষামূলক প্রশ্ন:
শিক্ষামূলক প্রশ্নকে ভাগ করা যায় নিম্নোক্ত ভাবে—
- কৌতূহল উদ্দীপক।
- তথ্য আহরণের সহায়ক।
- আত্মবিকাশ সৃষ্টিকারী।
(iii) শাসনমূলক প্রশ্ন:
শাসনমূলক প্রশ্নকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়—
- শ্রেণিকক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রশ্ন।
- শিক্ষক-শিক্ষার্থী পারস্পরিক সহযোগিতা ভিত্তিকারী প্রশ্ন।
- মনোযোগ আকর্ষণকারী প্রশ্ন
প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির উপযোগিতা (Usefulness)
(১) প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মাধ্যমে পাঠদান চলাকালীন সময় শিক্ষার্থীকে পাঠ্য বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা যায়।
(২) পাঠদান প্রক্রিয়া চলাকালে প্রশ্নকরণের মাধ্যমে অমনোযোগী শিক্ষার্থীকে পাঠ্যবিষয়ে মনোযোগী করে তোলা যায়।
(৩) প্রশ্নকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে উত্তরদানে সমর্থ করলে শিক্ষার্থীর সদ্য লখ জ্ঞানের পরীক্ষা সম্ভব হয়।
(৪) প্রশ্নকরণ ও উত্তর গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান আহরণে ব্যাপৃত না রেখে তাদের মধ্যে মৌখিক উত্তরদানের সাবলীলতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধি করা যায়।
(৫) প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে গৃহে পাঠ চর্চার উপযোগী, প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীকে গৃহ পাঠচর্চা অনুশীলনে ব্যাপৃত রাখা যায়।
(৬) প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মাধ্যমে পাঠ্য বিষয় *পর্কে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বুচি, অভিরুচি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা যায়।
উপসংহার (Conclusion)
প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে পাঠদান করালে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নকরণের বিষয় সম্পর্কে যথাযথ অবহিত করা প্রয়োজন। তা ছাড়া শিক্ষার্থীর উদ্দেশে প্রশ্ন হবে সুনির্ধারিত ও সুগঠিত। প্রশ্নগুলি হবে যথার্থ সত্যানুসন্ধানী, উদ্দেশ্যমূলক এবং জ্ঞান, বোধ, দক্ষতা, প্রয়োগ জাগরণ সাপেক্ষ। এছাড়া এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর প্রশ্নকেও যথাযথ মর্যাদা দেওয়া বাঞ্ছনীয়।