ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার
ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্দেশ্যে গত শতাব্দীর সপ্তম দশকের শুরু থেকে বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন নিয়োগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—’নির্বাচনি আইন সংশোধন-সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটি’ (১৯৭১), ‘তারকুন্ডে কমিটি’ (১৯৭৪), ‘দীনেশ গোস্বামী কমিটি’ (১৯৯০), ‘ভোহরা কমিটি’ (১৯৯৩), ‘ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত কমিটি’ (১৯৯৮), ‘ভেঙ্কটচালাইয়া কমিশন’ (২০০০), ‘কোর কমিটি’ (২০১০) প্রভৃতি।
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ পেশ করা হলেও তা রূপায়ণের বিষয়ে আজও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাপক বাস্তবোচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে নির্বাচন ব্যবস্থায় কিছু সংস্কার ইতিমধ্যে গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্য হল:
- দেশের সব নির্বাচন কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্রের (EVM) প্রবর্তন,
- নির্বাচন অবাধ হচ্ছে কি না তা পরিদর্শনের জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে সরাসরি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান,
- লোকসভা ও বিধানসভার ক্ষেত্রে প্রার্থীর জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধি,
- জেল বা পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন,
- রাজনৈতিক দলগুলিতে নগদ অনুদানের বিকল্প হিসাবে নির্বাচনী বন্ডের প্রবর্তন,
- রাজনৈতিক দলগুলিকে বিদেশী তহবিল গ্রহণের অনুমতি দেওয়া প্রভৃতি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, সুপ্রিম কোর্টের (২০০২ সালের ২রা মে) নির্দেশ অনুসারে বর্তমানে সংসদ ও রাজ্য আইনসভার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামার মাধ্যমে নিম্নলিখিত তথ্য সরবরাহের কথা বলা হয়েছে:
- নির্বাচন প্রার্থী অতীতে কোনো ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকলে সে-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানাতে বাধ্য থাকবেন।
- বিচারাধীন কোনো মামলায় প্রার্থী অভিযুক্ত হয়েছেন কি না অথবা দুই বছর বা তার অধিক সময়ের জন্য শাস্তিযোগ্য কোনো মামলার তিনি আসামি কি না—প্রত্যেক প্রার্থীকে সবিস্তারে তা জানাতে হবে।
- প্রত্যেক প্রার্থীকে তাঁর নিজের ও তাঁর স্বামী/স্ত্রীর এবং তাঁর পুত্রকন্যাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ইত্যাদি সম্পর্কে সবিস্তারে জানাতে হবে।
- প্রত্যেক প্রার্থীকে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেশ করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ভিত্তিতে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করে দেখার সময় হলফনামায় (এফিডেভিট) কোনো ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য অথবা প্রকৃত তথ্য গোপনের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। তা ছাড়া এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিপ্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতাও কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচন কমিশন রুলিং পার্টির দলদাসে পরিণত হয়েছে।
ভারতে নির্বাচনী সংস্কার সম্পর্কিত FAQs
ভারতের নির্বাচনী সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা কেন?
ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। যেমন—ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও সংশোধনের প্রক্রিয়া অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কালোটাকার প্রভাব নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে, নির্বাচনের প্রাক্কালে সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতি, মাফিয়া প্রভৃতি অসাধু ব্যক্তিবর্গের দাপট বৃদ্ধি পায়। বুথ দখল, রিগিং, ছাপ্পা ভোট প্রভৃতির সঙ্গে সঙ্গে নিরীহ ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন প্রভৃতি কাজে মাফিয়ারা মেতে ওঠে। ভারতে নিরক্ষর মানুষের আধিক্যের জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অবৈধ ও অনৈতিক কাজকর্ম ব্যাপকভাবে ঘটে থাকে। এইসব ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি ভারতের গণতন্ত্রের সাফল্যের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। ভারতের গণতন্ত্রকে ত্রুটিমুক্ত করতে হলে নির্বাচন সম্পর্কিত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি দূর করা প্রয়োজন। একারণে ভারতের নির্বাচনী সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়টি জাতীয় স্বার্থের সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য বিভিন্ন সংস্কারমূলক প্রস্তাব করা হয়েছে।