মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে আদালত হিসাবে এবং সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা ও অভিভাবক হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা ইউরোপীয় চিত্তাশীল ব্যক্তিদের আগ্রহ, আলোচনা, শঙ্কা ও সমালোচনার বিষয় বলে স্বীকৃত। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় লিখিত সংবিধানের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছে এবং শাসন ব্যবস্থা সংবিধানের সীমা মেনে পরিচালিত হয়। নিরপেক্ষভাবে সংবিধানের ব্যাখ্যা করবার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে বিচার বিভাগের ওপর এবং আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছে কিনা তা বিচারের ভার সুপ্রিম কোর্টের ওপর অর্পিত হয়েছে। সংবিধানবিদ ফাইনার মন্তব্য করেছেন যে, মার্কিন শাসনতন্ত্রই হল প্রধান এবং সংবিধানের ব্যাখ্যার দায়িত্ব আদালতের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। কার্যত আদালতই অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর।
সুপ্রিম কোর্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিবর্তনীয় শাসনতন্ত্রকে সময়োপযোগী করে পরিবর্তন সাধন করে। শাসনতন্ত্র কেন্দ্র নির্দিষ্ট এবং অঙ্গরাজ্যগুলির অবশিষ্ট ক্ষমতার অধিকারী হবার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল বলতে পারা যায়। পরবর্তীকালে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে জাতীয় জীবনে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংবিধান পরিবর্তন সহজসাধ্য ছিল না, অথচ জাতীয় স্বার্থে এই পরিবর্তন অপরিহার্য ছিল। সুপ্রীম কোর্ট শাসনতন্ত্রের বিনা সংশোধন সত্ত্বেও একে সজীব করে তুলতে সাহায্য করেছে। সুপ্রিম কোর্ট অনুমিত ক্ষমতা (Implied Powers) নীতির প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়তা করে। তাছাড়া গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে যে, আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি ছাড়া কোন ব্যক্তিকে জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কিন্তু সংবিধানে যথাবিহিত পদ্ধতির সঠিক সংজ্ঞা না থাকায় সুপ্রীম কোর্ট আইনসভা-প্রণীত আইনের কেবলমাত্র ব্যাখ্যা করে না, আইনের বৈধতা বিচারও করে থাকে।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট আইনের ব্যাখ্যা ও আইনের বৈধতা বিচার করে থাকে। আইনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট আইনের সঠিক অর্থ নির্ধারণ করে কিন্তু আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষেত্রে এটি লক্ষ্য করে যে সংশ্লিষ্ট আইন বা কাজ শাসনতন্ত্রের সীমা লঙ্ঘন করছে কিনা। বিচার সমীক্ষার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কার, বার্নস্টাইন ও মারফি বলেছেন যে মৌলিক সাংবিধানিক নিয়ম বা সুত্রগুলিকে যে আইন বা কাজ লঙ্ঘন করবে, সেগুলি সুপ্রিম কোর্ট পরীক্ষা করে বাতিল এবং সংবিধান-বিরোধী বলে ঘোষণা করতে পারবে। সুপ্রিম কোর্ট শুধু আইনের ব্যাখ্যাই করে না, আইন ও শাসন বিভাগীয় কার্যের বৈধতা বিচার করে যে-কোন আইন বা শাসন বিভাগের কাজকে শাসনতন্ত্র-বহির্ভূত বলে বাতিল করে দিতে পারে। আইনের বৈধতা বিচার বা বিচার বিভাগীয় সমীক্ষার মাধ্যমে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট শাসনতন্ত্রের অভিভাবক এবং নাগরিক অধিকারের সংরক্ষক হয়ে পড়েছে।