উত্তর ভারতের প্রাণকেন্দ্র কনৌজের অধিকার নিয়ে যে ত্রিপাক্ষিক সংগ্রাম বা ত্রিশক্তি সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটেছিল তা আদিমধ্য যুগের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সম্রাট হর্ষবর্ধনের সময় থেকে প্রাচীন মহোদয় বা কান্যকুব্জ বা কনৌজ (বর্তমান উত্তরপ্রদেশের রাজ্যের কনৌজ জেলায় অবস্থিত) ভারতের রাজনৈতিক আধিপত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। হর্ষবর্ধন কনৌজে তাঁর রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন এবং ভারতীয় রাজনীতির ভারকেন্দ্র মগধ থেকে কনৌজে স্থানান্তরিত হয়।
হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর, উত্তর ভারতে কোনো শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে বিভিন্ন রাজ্য ও রাজবংশ কনৌজের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কনৌজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা মানে ছিল গাঙ্গেয় উপত্যকার উর্বর ভূমিসম্পদ এবং বাণিজ্যিক পথের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এই সমস্ত কারণেই অষ্টম শতকে কনৌজের উপর আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নে পাল, গুর্জর-প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট রাজ্যগুলি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই তিনটি রাজবংশের মধ্যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যে লড়াই ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা অষ্টম শতাব্দীর শেষদিকে শুরু হয়েছিল তা ত্রিশক্তি সংঘর্ষ (Tripartite struggle) নামে পরিচিত।
◇ ত্রিপাক্ষিক সংগ্রামের কারণ
হর্ষবর্ধনের পরবর্তীকালে কনৌজের উপর আধিপত্য স্থাপন করা উত্তর ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নরপতিদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। কনৌজের রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে এটি একটি মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এইসব কারণে অষ্টম শতকের শেষদিকে কনৌজ দখলের প্রশ্নে দীর্ঘস্থায়ী ত্রিশক্তি সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, যা প্রায় দুশো বছর ধরে পাল, গুর্জর-প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলেছিল (৭৫০-৯৫০)।
(১) রাজনৈতিক কারণ: হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর কনৌজের রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। কনৌজ ছিল হর্ষের রাজধানী এবং তাঁর স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানটি উত্তর ভারতের রাজন্যবর্গের কাছে একটি মর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে। অষ্টম ও নবম শতকে কনৌজের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা মানে ছিল উত্তর ভারতের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা লাভ করা। এই কারণে বিভিন্ন রাজবংশ কনৌজ দখলের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।
(২) সামরিক কারণ: কনৌজের সামরিক গুরুত্বও ছিল অপরিসীম। এটি গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চলের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় কনৌজের সেনাবাহিনী সহজেই জলপথ ও স্থলপথে দোয়াবের পূর্ব ও পশ্চিমভাগে চলাচল করতে পারত। এছাড়া, কনৌজ উঁচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এটি একটি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল।
(৩) অর্থনৈতিক কারণ: কনৌজের উর্বর গাঙ্গেয় উপত্যকার ভূমি কৃষি ও অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করত। এই অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ মানে ছিল বিশাল সম্পদের অধিকারী, যা বড় সেনাবাহিনীকে সমর্থন করতে এবং বিস্তৃত প্রশাসনিক কাঠামোকে অর্থায়ন করতে পারত। এছাড়া, উপকূলের নৈকট্য বৈদেশিক বাণিজ্যকে সহজতর করত, যা কনৌজের অর্থনৈতিক আকর্ষণকে আরও বাড়িয়েছিল।
◇ পাল-প্রতিহার-রাষ্ট্রকূটদের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সংগ্রামের বিবরণ
৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুতে উত্তর ভারতের এক বিস্তীর্ণ অংশের রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং আর্যাবর্তের নানা স্থানে কয়েকটি শক্তিশালী স্বাধীন রাজ্যের উৎপত্তি ঘটে। এইসব রাজ্যগুলির মধ্যে রাজপুতানা ও মালবের গুর্জর-প্রতিহার রাজ্য, বাংলা-বিহারের পাল রাজ্য এবং দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট রাজ্য আর্যাবর্তে একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপনে সচেষ্ট হয়। আর্যাবর্তে প্রাধান্য স্থাপনের জন্য তাদের মধ্যে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হয় তা ত্রিপাক্ষিক সংগ্রাম (Tripartite struggle) নামে পরিচিত। পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট শক্তির মধ্যে দীর্ঘকালীন ত্রিপাক্ষিক দ্বন্দ্বকে মূলত তিনটি পর্বে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে।
(১) প্রথম পর্ব: প্রতিহার বংশের বৎসরাজ (৭৭৫-৮০০ খ্রিঃ) রাজপুতানা ও মধ্য ভারতে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে পূর্বদিকে রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। এই সময় বাংলার পাল রাজা ধর্মপাল (৭৭০-৮১০ খ্রিঃ) সমগ্র বাংলা ও বিহার জয় করে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। গাঙ্গেয় দোয়াব অঞ্চলের যুদ্ধে ধর্মপাল প্রতিহার-রাজ বৎসরাজের নিকট পরাজিত হন। বৎসরাজের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে রাষ্ট্রকূট রাজা ধ্রুব (৭৭৯-৭৯৩ খ্রিঃ) উত্তর ভারত অভিযান করেন এবং বৎসরাজকে পরাজিত করে রাজপুতানার মরু অঞ্চলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেন। এরপর ধ্রুব ধর্মপালের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং ধর্মপালকে পরাজিত করেন। তবে ধ্রুব বেশিদিন আর্যাবর্তে থাকতে পারেননি এবং দাক্ষিণাত্যে ফিরে যান। এরপর ধর্মপাল কনৌজসহ উত্তর ভারতের বিশাল অংশে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কনৌজের সিংহাসন থেকে ইন্দ্রায়ুধকে বিতাড়িত করে তাঁর প্রতিনিধি চক্রায়ুধকে সিংহাসনে বসান। খলিমপুর লিপি থেকে জানা যায় যে, ধর্মপাল কনৌজে একটি দরবারের আয়োজন করেন এবং উত্তর ভারতের বহু রাজা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
(২) দ্বিতীয় পর্ব: ধর্মপালের সাফল্য ছিল ক্ষণস্থায়ী। তাঁর রাজত্বকালের শেষ পর্বে প্রতিহার-রাজ বৎসরাজের পুত্র দ্বিতীয় নাগভট্ট (৮০০-৮২৫ খ্রিঃ) কনৌজ দখলের জন্য অগ্রসর হন। এই উদ্দেশ্যে তিনি সিন্ধু, বিদর্ভ, অন্ধ্র প্রভৃতি শক্তির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। তিনি কনৌজ দখল করে ধর্মপালের প্রতিনিধি চক্রায়ুধকে বিতাড়িত করেন। এই অবস্থায় ধর্মপাল সম্ভবত রাষ্ট্রকূট-রাজ তৃতীয় গোবিন্দের সাহায্যপ্রার্থী হন, কারণ রাষ্ট্রকূট রাজকন্যা রন্নাদেবী ছিলেন ধর্মপালের পত্নী। তবে রাষ্ট্রকূটদের সাহায্য আসতে বিলম্ব হওয়ায় ধর্মপাল একাই কনৌজ পুনরুদ্ধারের জন্য এগিয়ে যান। ধর্মপাল প্রতিহার-রাজ নাগভট্টকে বাধা দিতে অগ্রসর হয়ে মুঙ্গেরের কাছে এক যুদ্ধে পরাজিত হন। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রকুট-রাজ ধ্রুবের উত্তরাধিকারী তৃতীয় গোবিন্দ (৭৯৩-৮১৪ খ্রিঃ) নাগভট্টকে পরাজিত করেন। ধর্মপাল তৃতীয় গোবিন্দের বশ্যতা স্বীকার করেন। রাষ্ট্রকূট-রাজ দাক্ষিণাত্যে ফিরে গেলে ধর্মপাল হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।
(৩) তৃতীয় পর্ব: ধর্মপালের পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০ খ্রিঃ) প্রতিহার-রাজ রামভদ্র এবং তাঁর উত্তরাধিকারী মিহিরভোজ বা প্রথম ভোজ (৮৩৬-৮৮৫ খ্রিঃ)-কে পরাজিত করেন। দেবপালের শাসনকালে পাল সাম্রাজ্য তার গৌরবের শিখরে পৌঁছায়। সম্ভবত দেবপাল রাষ্ট্রকূট-রাজ প্রথম অমোঘবর্ষ (৮১৪-৮৭৮ খ্রিঃ)-কেও পরাজিত করেন। তবে দেবপালের মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। ৮৬০ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রকূটদের হাতে পালরাজা নারায়ণপাল (৮৫৪-৯০৮ খ্রিঃ) পরাজিত হন। প্রতিহার-রাজ মিহিরভোজ কনৌজ ও বুন্দেলখণ্ড জয় করে মগধের সীমান্তে এসে হাজির হন। পরবর্তী প্রতিহার-রাজ প্রথম মহেন্দ্রপাল (৮৮৫-৯১০ খ্রিঃ)-এর আমলে প্রতিহার সাম্রাজ্য গৌরবের চরম শিখরে আরোহণ করে। তিনি বাংলা ও বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে পাল রাজ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেন। ৯১৬ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রকূট-রাজ তৃতীয় ইন্দ্র (৯১৪-৯২২ খ্রিঃ) প্রতিহার-রাজ মহীপাল (৯১২-৯৪৪ খ্রিঃ)-কে পরাজিত করে কনৌজ দখল করেন। প্রতিহার-শক্তির উত্থান আর সম্ভব হয়নি। রাষ্ট্রকূটদের সাফল্যের মধ্য দিয়ে ত্রিপাক্ষিক সংগ্রামের (Tripartite Struggle) অবসান ঘটে। কিন্তু এই সাফল্যও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর ভারতে তুর্কী আক্রমণ শুরু হয়ে যায়।
◇ ত্রিপাক্ষিক সংগ্রামের ফলাফল ও তাৎপর্য
প্রায় ২০০ বছরব্যাপী কনৌজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট শক্তির মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সংগ্রাম হয়েছিল। ত্রিপাক্ষিক সংগ্রামের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি ছিল অনাবশ্য শক্তিক্ষয়। এই দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের মাধ্যমে কোনো পক্ষই তাঁদের স্বপ্ন স্থায়ীভাবে পূরণ করতে পারেনি। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ত্রিপাক্ষিক সংগ্রামের প্রভাব/ফলাফল ও রাজনৈতিক গুরুত্ব/তাৎপর্য ছিল সুদুরপ্রসারী।
(১) আর্থিক ক্ষতি: দীর্ঘদিন ধরে পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট শক্তি পরস্পরের বিরুদ্ধে বিরোধ ও যুদ্ধে লিপ্ত থাকার ফলে প্রতিটি শক্তির যথেষ্ট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সামরিক সজ্জা ও যুদ্ধ পরিচালনায় প্রতিটি শক্তিকে প্রভৃত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল।
(২) রাজস্ব বৃদ্ধি: সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উক্ত শক্তিগুলি তাদের প্রজাদের ওপর বাড়তি রাজস্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা করেন। ফলে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। বাংলায় পাল রাজাদের বিরুদ্ধে কৈবর্ত বিদ্রোহ এই রকমই একটি বিদ্রোহ।
(৩) আঞ্চলিকতাবাদের উত্থান: ত্রিশক্তি সংগ্রামের ফলে ভারতের রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি ভেঙে পড়েছিল। তিনটি শক্তিই যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ শাসনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে থাকে। ভারতের বিভিন্ন অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঞ্চলিক শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়। এই তিনশক্তির সীমান্তে নেপাল, কামরূপ, কাশ্মীর, উৎকল প্রভৃতি স্বাধীন রাজ্য স্থাপিত হয়। পূর্ব উপকূলে চালুক্য ও গঙ্গাবংশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, গুজরাটে সোলাক্কিরা রাজ্য স্থাপন করেছিল। এভাবে সংকীর্ণ প্রাদেশিকতার উদ্ভব হয়েছিল।
(৪) সংহতি ও সার্বভৌমত্ব স্থাপনে ব্যর্থতা: পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট শক্তিগুলির কোনোটিই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভের মাধ্যমে ভারতে ঐক্যবদ্ধ সার্বভৌম ও স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তাই কোনো কোনো ইতিহাসবিদ একে ব্যর্থ সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন।
(৫) সাম্রাজ্যের পতন: পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট শক্তিগুলি দীর্ঘকাল যুদ্ধে লিপ্ত থাকার ফলে তাদের দুর্বলতার সুযোগে সামন্তশ্রেণির বিদ্রোহ মাথা তুলতে শুরু করে। ফলে প্রতিটি সাম্রাজ্য দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং এক সময় সেগুলির পতন ঘটে। এই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা পরবর্তীকালে ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
(৬) ভারতীয়দের শক্তি হ্রাস ও তুর্কি আক্রমণ: দীর্ঘদিন ধরে ত্রিশক্তি দ্বন্দ্বের ফলে তৎকালীন ভারতের প্রধান শক্তিগুলি অর্থাৎ পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূটদের সামরিক শক্তি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। প্রধান শক্তিগুলির এই সামরিক দুর্বলতা ভারতে তুর্কি আক্রমণের পথ প্রশস্ত করেছিল। তুর্কি আক্রমণকারী সুলতান মামুদ ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে কনৌজ দখল করেন। ফলে কনৌজ-সহ উত্তর ভারতে বৈদেশিক শাসনের অন্ধকার নেমে আসে।
(৭) সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান: দীর্ঘকাল ত্রিশক্তি সংঘর্ষের ফলে পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূটদের দুর্বলতার সুযোগে সারাদেশে অনেকগুলি ছোট ছোট রাজ্য স্থাপিত হয়, এরা আঞ্চলিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উৎসাহ দিয়েছিল। বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ম, সাহিত্য, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্থানীয় রীতিনীতি, আচার-আচরণ গড়ে উঠেছিল।
◇ উপসংহার
ত্রিশক্তি সংঘর্ষ কেবল কনৌজকে কেন্দ্র করে লড়াই ছিল না; এটি ছিল রাজনৈতিক আধিপত্য ও মর্যাদার জন্য এক দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম। ত্রিপাক্ষিক সংগ্রামে কোনো শক্তি নিরবচ্ছিন্ন জয়লাভ করেনি। এর ফলে উত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে এক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, যা ভারতের ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। দশম শতকে ভারতে তুর্কি আক্রমণ শুরু হলে তাদের প্রতিহত করার ক্ষমতা এদের উত্তরাধিকারী রাজ্যগুলির ছিল না।
◇ FAQs About Tripartite Struggle
Q1. ত্রিশক্তি সংগ্রাম কোন স্থানকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল?
ত্রিশক্তি সংগ্রাম কনৌজকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল।
Q2. ত্রিপাক্ষিক যুদ্ধ কতদিন চলেছিল?
ত্রিপাক্ষিক যুদ্ধ প্রায় দুইশত (750-950) বছর ধরে চলেছিল।
Q3. কনৌজ কোথায় অবস্থিত?
কনৌজ ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত। এটি রাজধানী লখনউ থেকে প্রায় ১০৪ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং কানপুর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গঙ্গা (গঙ্গা) নদীর কাছে অবস্থিত।