পঞ্চ শর্তের শপথনামায় জাপানে বহির্বিশ্বের আলোকিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা হয়। মেইজি যুগে জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য জাপানী ছাত্রদের পাশ্চাত্য দেশে পাঠিয়ে পশ্চিমের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলার ব্যবস্থা করা হয়।
মেইজি রাষ্ট্র জাপানীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য বিদেশ থেকে নানা ধরনের বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসে। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ থেকে মোট ৩৪ জন খনি বিশেষজ্ঞকে নিয়ে আসা হয় খনিগুলিকে আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত করার জন্য।
আর. এইচ. ব্রান্টন (R. H. Brunton) নামে একজন ইংরেজ নৌবিজ্ঞানীকে নৌশিল্পের উন্নতিকল্পে আমন্ত্রণ জানানো হয়। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিসাধনের জন্য বহু জার্মান চিকিৎসককে জাপানে নিয়ে আসা হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক ই. এস. মর্স (E. S. Morse) জাপানে আসেন। নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব ও সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা তাঁরই তত্ত্বাবধানে জাপান পূর্ণতা লাভ করতে আরম্ভ করে। আমেরিকার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক আর্নেস্ট ফেনোলোসা (Earnest Fenollosa) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে জাপানে আসেন।
একদল সমাজ সচেতন নাগরিকের উদ্যোগে কোনরকম সরকারি সাহায্য ছাড়াই কতকগুলি মন্দির বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। এগুলিকে বলা হত ‘টেরাকোয়া’ (Terakoya)। এই বিদ্যালয়গুলিতে সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়তে, লিখতে ও প্রাথমিক স্তরে অঙ্ক করতে শেখানো হত। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় জাপানী ছেলেদের ৪০ শতাংশ এবং জাপানী মেয়েদের ১৫ শতাংশ এই বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষালাভ করত।
ফুজিমারোর উদ্যোগে বিদ্যালয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ত্রিস্তর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়—প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়। এই ত্রিস্তর শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুদক্ষ করার তাগিদে জন মারে নামে এক মার্কিন বিশেষজ্ঞকে জাপানে নিয়ে আসা হয়েছিল। এই সময়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবার জন্য বিশেষ ধরনের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়গুলিকে বলা হত নর্মাল স্কুল (Normal School) বা ‘শিহান গাক্কো’ (Shihan Gakko)। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানে প্রথম পাশ্চাত্য ধাঁচে বিশ্ববিদ্যালয়, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইউরোপীয় ভাষায় লেখা ধ্রুপদী সাহিত্য, উপন্যাস, ইতিহাস, রাজনীতি ও দর্শন সংক্রান্ত বই জাপানী ভাষায় অনুবাদ করা হয়। অনুবাদ কার্যে সর্বাপেক্ষা নামী ব্যক্তি ছিলেন ফুকুজাওয়া ইউকিচি।
পাশ্চাত্য ধরনের পাঠ্যসূচী নিয়ে সরকার বিভিন্ন বিদ্যালয় স্থাপন করেন। মিশনারী ও বেসরকারী উদ্যোগকে বিদ্যালয় স্থাপনে উৎসাহ দেওয়া হয়। হাতেকলমে কাজ শেখানোর জন্য বেশ কিছু নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল।
জাপানে ওয়াসেদা ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কাজ চলে। নারী শিক্ষার উন্নতির জন্যে সূদা কলেজ ও নিহন যোশী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। জাপান দ্রুত গতিতে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করে।